মাসুদের ইফতার
মাসুদরে নিয়া ইফতারি কিনতে বের হইসি। সারাদিন ডিউটি দেয়, ভাবলাম কিছু ভাল-মন্দ কিনে খেতে দেই। রমজান হচ্ছে দান-খয়রাত করে সোয়াব কামানোর মাস। এই এক মাস যা দান করব তার সত্তুর গুন বেশি সোয়াব হবে। বড়লোক হবার এই এক মজা। টাকা দিয়া সোয়াব কিনা যায়।
মসজিদের সামনেই ইফতারির দোকান বসছে। প্রচুর ভিড়। ভিড়ের মাঝখানেই এক অটো রিকশা মাসুদের পায়ের উপর চাকা তুলে দিল। আমি কিছু বোঝার আগেই মাসুদ অটোচালকের ঘাড়ের উপর দুইটা বন চটকনা বসায় দিল। বলতেসে তোর ভাগ্য ভালো এখন রোজা চলে তাই গালে মারলাম না।
অটোরিকশা চালকেদের ইগো অনেক বেশি। সে তো আর সাধারণ রিকশা চালক না। তার রিকশাকে বাংলার টেসলা বলা হয়। সে "মাদারচোত' বলে মাসুদের উপর ঝাপায়া পড়সে। বেশ লেগে গেল ভীড়ের মাঝে ধুন্দুমার কান্ড।
আমি পকেট থেকে মোবাইল বের করে এই দৃশ্য ধারন করা শুরু করলাম। দুইজনের একজন মরে গেলে প্রমান রাখা লাগবে। আশেপাশের কয়েকজন যতই থামানোর চেষ্টা করে এই দুইজনের মারামারি ততই বাড়ে। তবে মাসুদের শক্তি বেশি হওয়াতে সে জিতে যাবে মনে হচ্ছে। আমি শিষ দিয়ে তাকে উৎসাহ জানাবো কিনা চিন্তা করছি।
অবশেষে অটোচালক রণে ভংগ দিল সুবিধা করতে পারবে না বুঝে। গজগজ করতে করতে বলতেসে, রোজা রমজানের দিন তোরে কিছু কইলাম না। তোরে খালি একবার একলা পাইয়া লই।
- তুই আমার বালটা ছিড়িস...। মাসুদ একটা অশ্লিল ভঙ্গি করে চোখ টিপে দিল অটোচালককে।
মাসুদ কুকুরের মত হাঁপাতে হাঁপাতে আসল। চোখে যুদ্ধ জেতার ঝিলিক। শার্টের দুইটা বোতাম গায়েব, গলায় খামচি।
- তোর তো রোজা ভেঙে গেসেরে মাসুদ।
- কি যে কন বস! আমি কি ইচ্ছা কইরা মারামারি করসি? শা... পায়ের উপর তুইলা দিয়া কয় চাপস না কেন। সরি না বইলা উলটা বেয়াদবি করে। আমার একটা সম্মান আছে না?
- হ।। তুই যুদ্ধে জিতছস। কি এনাম চাস?
- জিলাপি আর হালিম কিনা দেন, লগে নান রুটি। আজকে ভাল পরিশ্রম হয়ে গেলো।
আমি মাসুদরে দুই-নম্বর শাহী হালিম আর কালা তেলে ভাজা জিলাপি কিনে দিলাম। নান-রুটি পাই নাই, টাকা দিয়ে কইসি সন্ধ্যায় গিয়া নিয়া আসিস।
মাসুদ বেজায় খুশি। আমি জানি এই টাকা দিয়া সে নানরুটি না কিনে সিগারেট খাবে। তারে পুলিশের কাছে ধরাইয়া দিতে পারলে ভালো হইত। দেশে নাকি ধূমপানের বিরুদ্ধে নতুন আইন হইতেসে। মাসুদরে ট্রান্সজেন্ডার বানাইয়া পাবলিক প্লেসে ধূম্রপানের আওয়তায় কেলানি দেয়া গেলে ভালো লাগত।
কিন্তু আফসোস এই থানার দারোগা নিজেই বিড়িখোর। বিড়ি খাইতে গেলে তার সাথে মাঝে মধ্যেই গনির দোকানে দেখা হয়ে যায়। দেশটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, রক্ষক যখন বিড়িখোর হয় তখন ভালো মানুষেরা কি করবে?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন