নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস, ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস

ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার ভাঙ্গা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে বুলডোজার আনা হয়েছে, এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। এর সাক্ষী না হলে কি হয়! বুড়া বয়সে পোলাপানরে অন্তত বলতে পারব আমি ৭১ দেখি নাই, কিন্তু ৫ই ফেব্রুয়ারী দেখেছি। এইটাও মুক্তিযুদ্ধের সমান।

রাতেই আসার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু একটা বিয়ার দাওয়াতে গেসিলাম। লুটপাটের থেকে দাওয়াত খাওয়া বেশি ইম্পর্টেন্ট মনে হইসিলো আমার কাছে। অবশ্য টিভিতে লাইভ দেখতেসিলাম তৌহিদি ছাত্র-জনতার উল্লাস। সকাল সকাল তাই নিচে নেমে মাসুদরে খুঁজতেছি। সাথে একজন সঙ্গী থাকা দরকার।

মাসুদ যথারীতি গেইটে নাই। ফোন দিলাম, "তুই কইরে মাসুদ?"

- বস আমি তো একটু ধানমন্ডি আইসি। এইখানে স্বৈরাচারের কারখানা উড়াইয়া দেয়া হইতেসে!
- তুই বইলা গেলি কারে?

- আপনে তো ঘুমাইতেসিলেন, তাই বিরক্ত করি নাই।
- তুই ওইখানেই থাক, তোরে যদি আজকে হাতের কাছে পাই। নিজের কেল্লা পাহারা দেয়া রাইখা তুই গেছস বিপ্লবী সাজতে?

আমি ফোন কেটে দিয়ে একটা অটোরিকশা ঠিক করলাম। ৩২ নম্বর যাবো শুনে সে দুইশ টাকা দাবি করল। আমি দামদামি না করেই উঠে গেলাম। দেশের এই ক্রান্তি লগ্নে টাকা পয়সা কোন বিষয় না। অটোরিকশা চালক দেখতে গুন্ডার মত। আজকাল অবশ্য বেশিরভাগ অটোরিকশা চালকই দেখতে গুন্ডার মত। গুন্ডার মত দেখতে একজন সাথে থাকলে নিরাপদ লাগে।

৩২ নম্বর লোকে লোকারণ্য। আমার অটো চালক বলল "ভাইজান কি আবার যাবেন?"

- হুম, তুমি ওয়েট করবা?
- কোন সমস্যা নাই, আমি আছি। 

- তাইলে এইখানেই থাকো। আমি মাসুদরে ফোন দিলাম আবার। সে পাঁচ মিনিট পরে আসলো আমার কাছে। তার হাতে কিছু ইট আছে আর একটা বস্তা।

- এইগুলা কি আনছিস?
- কিছু পাইতেসি না বস নেয়ার মত। কয়টা ইটা নিয়া আসছি। বস্তায় কিছু কাগজ আর ফাইল আছে। একজনের কাছ থেকে কাইড়া নিসি।

- চুরি করতেছিস?
- কি যেন কন বস? এইগুলা গণিমতের মাল। সবাই নিতেসে, আমিও নিয়া আসছি।

আমি কিছু বললাম না। মব সাইকোলজি নিয়ে এখন জ্ঞান দেয়ার সময় না। জ্ঞান পরে দোচানো যাবে। আমি নাটক দেখতেসি। মানুষের উল্লাস দেখতেসি। বড় একটা মেশিন একটা বিখ্যাত বাড়িতে গুতা দিতেসে এইটা একটা ফ্যাসিনেটিং বিষয়। ছোট ছোট ডান্ডা হাতে মোবাইল ভ্লগাররা ঘুরতেসে। কিছু হুজুর টাইপের লোকজন হাতুড়ি নিয়া দেয়ালে বাড়ি দিতেসে সোয়াবের আশায়, ইন্টারভিউ দিতেসে ক্যামেরার সামনে। দিস প্লেস ইজ এবসুলেট সিনেমা। ইতিহাস ভাইঙ্গা নতুন ইতিহাস গড়ার চেষ্টা দেখতে খারাপ লাগতেসে না।

ঘন্টা দুয়েক পর আমি, মাসুদ আর আমাদের গুন্ডা অটোওয়ালা কিছু রড, ইটা আর এক বস্তা কাগজ নিয়া রওনা দিলাম বাসার দিকে। আজকের দিনটা বৃথা যায় নাই।

 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন