ডিসেম্বরের শীত
সদানন্দ বরাবরই বিশাল বিশাল প্লানিং করে। যার কোনটাই শেষ পর্যন্ত সফল হয় না। গতকাল সারাদিনে সে আমারে তিনবার কল দিসে আড্ডা দিতে যাবার জন্য। প্রতিবারই আমি শুধু হাসছি।
কারন তার প্লানিং এ সে কখনো অন্যদের সমস্যারে গোনায় ধরে না। আমি যখন দুপুরের খাবার রেডি করতেসি, সে তখন গাড়ি নিয়া বের হইসে তেল নিতে।
যার ইকোনমিক কন্ডিশন যত ছড়ানো সে তত বেশি ঝামেলায় থাকে। আমার ঝামেলা খাবার রান্না করা নিয়ে, তার ঝামেলা গাড়ির তেলের লাইন লম্বা হওয়া নিয়ে।
মানুষ বড়ই বিচিত্র। আমাকে কালকের চিন্তা করতে হয়না, আবার কাউকে আজকে বাজার কিভাবে হবে সেই চিন্তা করতে হয়। পৃথিবীটা খুব নিষ্ঠুর একটা জায়গা।
এই দুঃখ ভুলতে সন্ধ্যায় রাসেলের ফোন পেয়ে চলে গেলাম। রাসেল কালেভদ্রে ফোন দেয়। তার নাম শুনলেই আমার ই-ভ্যালির কথা মনে পড়ে। রাসেলের আড্ডায় গিয়ে কিছু মুমিন বান্দা পেয়ে গেলাম। এরা সবাই নামাজ পড়ে ঠিকমত, কিন্তু মদ খাওয়া হারাম এইটা বিশ্বাস করে না।
আসলে জগতের সকল আনন্দ পাপে। পূন্যের ফল চোখে দেখা যায় না। আর আনন্দ বাদে মানুষ বাঁচে না। মইরা গিয়া ধর্ম পালনের কোন মানে দেখি না।
পল্টনের আশেপাশে যে এত এত বিদেশী মদ পাওয়া যায় সেটা আমি জানতাম না। গতকালকের সভায় এই বিশেষ জ্ঞান লাভ করে আমি খুব প্রীত হলাম। দেশ তাইলে পুরা ডুবে যায় নাই। কয়দিন খালি ডুব দিয়া ছিলো। বিপ্লব হোক আর যাই হোক, বাঙ্গালি আসলে একটা ফুর্তিবাজ জাতি।
রাত এগারোটায় জলসা ভেঙে কিছু লালপানি গলায় দিয়ে রাস্তায় নামলাম। রাতের ঢাকা খুব সুন্দর। কিছু শীত ইতিমধ্যে নেমে গেছে। শাহবাগের রাস্তায় এক তরুনী দেখলাম খুব সাজগোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। থাকুক... কিছু মানুষের উষ্ণতা দরকার। টাকার বিনিময়ে সেটা কিনতে পারলে সমস্যা কই?
রাস্তঘাট ফাঁকা, অঘোষিত ক্যান্টনমেন্ট ঢাবি, দশটার পর তার দরজা খুলে দেয়। টিএসসিতে ধুন্দুমার মানুষের ভীড়।
এই শহরে আসলে আড্ডা দেয়ার জায়গা নেই, মানুষের আনন্দ করার কোন জায়গা নেই। ঢাকা একটা নিরানন্দ শহর। কেউ একজন আনন্দ করতে গেলেই, আরেকজন বলে - চুপ!