পোস্টগুলি

ডিসেম্বর, ২০২৪ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ডিসেম্বরের শীত

সদানন্দ বরাবরই বিশাল বিশাল প্লানিং করে। যার কোনটাই শেষ পর্যন্ত সফল হয় না। গতকাল সারাদিনে সে আমারে তিনবার কল দিসে আড্ডা দিতে যাবার জন্য। প্রতিবারই আমি শুধু হাসছি।

কারন তার প্লানিং এ সে কখনো অন্যদের সমস্যারে গোনায় ধরে না। আমি যখন দুপুরের খাবার রেডি করতেসি, সে তখন গাড়ি নিয়া বের হইসে তেল নিতে।

যার ইকোনমিক কন্ডিশন যত ছড়ানো সে তত বেশি ঝামেলায় থাকে। আমার ঝামেলা খাবার রান্না করা নিয়ে, তার ঝামেলা গাড়ির তেলের লাইন লম্বা হওয়া নিয়ে।

মানুষ বড়ই বিচিত্র। আমাকে কালকের চিন্তা করতে হয়না, আবার কাউকে আজকে বাজার কিভাবে হবে সেই চিন্তা করতে হয়। পৃথিবীটা খুব নিষ্ঠুর একটা জায়গা।

এই দুঃখ ভুলতে সন্ধ্যায় রাসেলের ফোন পেয়ে চলে গেলাম। রাসেল কালেভদ্রে ফোন দেয়। তার নাম শুনলেই আমার ই-ভ্যালির কথা মনে পড়ে। রাসেলের আড্ডায় গিয়ে কিছু মুমিন বান্দা পেয়ে গেলাম। এরা সবাই নামাজ পড়ে ঠিকমত, কিন্তু মদ খাওয়া হারাম এইটা বিশ্বাস করে না।

আসলে জগতের সকল আনন্দ পাপে। পূন্যের ফল চোখে দেখা যায় না। আর আনন্দ বাদে মানুষ বাঁচে না। মইরা গিয়া ধর্ম পালনের কোন মানে দেখি না।

পল্টনের আশেপাশে যে এত এত বিদেশী মদ পাওয়া যায় সেটা আমি জানতাম না। গতকালকের সভায় এই বিশেষ জ্ঞান লাভ করে আমি খুব প্রীত হলাম। দেশ তাইলে পুরা ডুবে যায় নাই। কয়দিন খালি ডুব দিয়া ছিলো। বিপ্লব হোক আর যাই হোক, বাঙ্গালি আসলে একটা ফুর্তিবাজ জাতি।

রাত এগারোটায় জলসা ভেঙে কিছু লালপানি গলায় দিয়ে রাস্তায় নামলাম। রাতের ঢাকা খুব সুন্দর। কিছু শীত ইতিমধ্যে নেমে গেছে। শাহবাগের রাস্তায় এক তরুনী দেখলাম খুব সাজগোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। থাকুক... কিছু মানুষের উষ্ণতা দরকার। টাকার বিনিময়ে সেটা কিনতে পারলে সমস্যা কই? 

রাস্তঘাট ফাঁকা, অঘোষিত ক্যান্টনমেন্ট ঢাবি, দশটার পর তার দরজা খুলে দেয়। টিএসসিতে ধুন্দুমার মানুষের ভীড়।

এই শহরে আসলে আড্ডা দেয়ার জায়গা নেই, মানুষের আনন্দ করার কোন জায়গা নেই। ঢাকা একটা নিরানন্দ শহর। কেউ একজন আনন্দ করতে গেলেই, আরেকজন বলে - চুপ!

মিনা বাজার

আজিমপুর মিনা বাজার আউটলেটে গেলাম সেদিন। উবার আসতে দেরি করতেসে তাই হুদাই এটা ওটা নাড়তেসি। ঢাকা ভার্সিটির দিকে নাকি পোলাপান সব গেইট আটকাইয়া নিজেদের ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে ঘোষনা করেছে। তাই এলাকা জুড়ে বিশাল জ্যাম। উবার চালক খালি বলে আসতেসি, কিন্তু আসার নামগন্ধ নাই।

শেলফে দেখলাম মোয়া, নাড়ু এইগুলা রাখা আছে। কিন্তু প্রচুর চাইনিজ তেলাপোকা ঘুরঘুর করতেসে সেগুলার উপর। একটা চিড়ার প্যাকেটের ভিতরেও দেখলাম কয়েকটা আছে।

একজনরে ডাক দিয়ে দেখাইলাম, বেডি কিছু না বলে চিড়ার প্যাকেট নিয়ে চলে গেল। আমি আর মোয়া কিনলাম না। কয়েকটা ড্রিঙ্কস নিয়ে কাউন্টারে চলে গেলাম। টিন ফুটা কইরা অন্তত চাইনিজ তেলাচুরা ঢুকতে পারবে না।

- ভাই আপনাদের খাবারের শেলফে প্রচুর তেলাপোকা। এইগুলা তো ফালাই দেয়া দরকার।

কাউন্টারের ছেলেটা ব্যাপক ব্যস্ত। শুধু বলল- "তেলাপোকার ঔষধ দিতে হবে।"

- তেলাপোকার ঔষধ পাশের শেলফেই আছে। আমি দিয়ে দেই?

পোলায় কোন কথা বলে না। একটা হিমু হিমু ভাব আছে এর মধ্যে। জগতে দুই-চাইরটা তেলাপোকা থাকলেই কি আর না থাকলেই কি?

- তেলাপোকা তো কামড় দেয় না।

এই মহাজ্ঞান লাভ করে আমি মিনা বাজার থেকে বের হয়ে আসলাম। অর্বাচীনের সাথে তর্ক করে কি লাভ? এই দেশের মানুষ যেরকম সুপারশপও সেরকম হবে। এইখানে তেলাপোকা আর ইঁদুর থাকাটা খুব স্বাভাবিক!

একজন ম্যাজিট্রেটকে ফেইসবুকে মাঝেমধ্যেই দেখি ব্যপক ভাবের সহিত সব জায়গায় গিয়ে তদারকি করেন। কিন্তু খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে দেশে কোন ট্রেইনিং দেয়া হয় কিনা জানি না। দোকান খোলার আগে সার্টিফিকেশন লাগে কিনা জানি না।

এরা যদি মদ বেচত তাইলে অবশ্য আমি মাইন্ড করতাম না। মদে কোন ভেজাল নাই। পুরান মদ টেস্টি হয়।

মিনা কার্টুন দেখতাম ছোটবেলায়। সে দৈত্যের কাছে স্বপ্নে ল্যাট্রিন চায়, কেন চায় আজও আমি বুঝি নাই। আমরা ল্যাট্রিন বিপ্লবে সফল হয়েছি। ইন্ডিয়ানরা নাকি এখনও খোলা আকাশের নিচে হাগে। প্রাকৃতিক কাজ প্রকৃতির সান্নিধ্যেই উত্তম।

আমরা উত্তম জাতি। আমরা বিপ্লবী।

উবার আসছে। সে খিস্তি করতেসে। রাস্তায় জ্যাম নাকি ইচ্ছা কইরা লাগাইসে। আমি জিগাইলাম- "লাল স্বাধীনতা কেমন লাগছে।"

- ভাই, মজা কইরেন না। পছন্দ না হইলে নামায় দিবো কিন্তু।

- উত্তম...। আমি চুপ করে গেলাম। তার অবশ্যই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আছে আমাকে নামিয়ে দেয়ার। গন্তব্যে গিয়ে তাকে একটা পাঁচ তারা দিয়ে দেবো।

 


 



বাতির নিচে অন্ধকার থাকে, পানির নিচে কুমির

মন মেজাজ অত্যধিক খারাপ থাকায় কয়দিন বাসা থেকে বের হই নাই। ভোমা আর সদানন্দের পারিবারিক ঝামেলাতেও নাক গলাই নাই। মেয়েলোক ঘটিত ঝামেলায় নাক না গলানোর শিক্ষা আমি ইতিহাস থেকে আমি নিয়েছি। এই কারনে ট্রয় নগরী পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। যদিও অনেক ইতিহাসবেত্তা বলবেন পুরো ব্যপারটাই পরকীয়ার কারনে ঘটেছে। কিন্তু চিন্তা করে দেখেন, মেয়ে মানুষ না থাকলে পরকীয়া কিভাবে হবে?

যাক সে কথা, সেদিন সন্ধ্যায় সদানন্দ ফোন দিয়া বলে ভোমা আর সে আসতেসে দেখা করতে। বুঝলাম মিটমাট হয়ে গেছে। গেলাম চিল করতে। সদায় মাল খায় না। তাই স্টার কাবাব থেকে একপিস গরুর শিক কিনে দিল। আমি আর ভোমা কিঞ্চিত জলপান করলাম। সেখানেও সদার কাছ থেকে কিছু খসানো গেলো। যদিও বারে আমরা জলপান করার জন্য যাই না। বারের খাবার আর সালাদ খুবই উচ্চমার্গীয় হয়। সেইটার লোভেই বারে যাওয়া।

সদানন্দরে জিজ্ঞেস করলাম, টেকাটুকা কই পাস? বউয়ের কাছ থেকে নিছস?

- বউ দিবো কেন? এইটা ব্যাংক থেকে লোন নিসি। সেইটাই খরচ করতেসি। মাসে মাসে কিস্তি দেই ব্যবসার থেকে। শেষ হইলে আবার লোন নিমু।

- অসাম... আমি মনে মনে বললাম।

ভোমায় বলল, প্যাড়া নাই বন্ধু চিল। টেকা আছেই খরচ করবার জন্য। ব্যাংকের হোক আর নিজের হোক, টেকার ধর্মই খরচ হওয়া।

আমি এই ব্যাপারে আর কথা বাড়াই না। বারে অনেক দাড়িওয়ালা মুরুব্বী দেখা যাচ্ছে। দেশের পরিস্থিতি খুব খারাপ। কে কার থেকে বড় ইতর এইটা প্রমানের আপ্রান চেষ্টা চলছে। আর বাদ বাকি দর্শক যারা আছে, তারা সবাই এখানে সালাদ খাইতে আসে আমাদের মতো।