পোস্টগুলি

নভেম্বর, ২০২৪ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ঝগড়া

সদানন্দ আর ভোমায় ঝগড়া লাগসে। প্রথমদিন সদানন্দ ফোন দিয়া কি যে কইল সেইটা আমার মাথার উপর দিয়া গেল। তবে এটা শিওর - ভোমায় অরে খান... মাগি কইয়া গাইল দিসে। তার বউরে নিয়াও নাকি মেলা আকাশ-পাতাল বক্তব্য দিয়েছে।

আমি শুধু শুনলাম আর হুঁ হুঁ করলাম। 

কোন মন্তব্য করতে পারি নাই দেইখা সদানন্দ কিছুটা ক্ষেপল আমার উপর। দুইবার ফোন দিয়াও তারে পাই নাই পরেরদিন।

এরপর ভোমায় আবার ফোন দিয়া একইরকম স্ক্রিনশট পাঠায়া কয়, সদানন্দ হালায় একটা মাতাল, উজবুক।

আমি শুধু শুনলাম আর হুঁ হুঁ করলাম। 

অন্যসময় কেউ ঝগড়া লাগলে মনে বেজায় আনন্দ হয়। আজকে কিছুই ফিল হইল না। নিরব থাকলাম। তারমানে আমি কবি হতে পেরেছি।

কারন, "কবি এইখানেই নিরব।"

নিরবতা আবার সম্মতির লক্ষন। সেই হিসেবে সদানন্দ আর ভোমা দুইটাই বলদ কিসিমের। সেইটাতে আমি সম্মতি দিসি। মারামারি লাগসে তাদের বউগো কথাবার্তা নিয়া। মাইয়ালোকের ক্যাচাল বিয়ার পরেও গেলনা। এই জন্যেই কবি বলেছেন পুরুষের সবথেকে বড় শত্রু তার নুনু।

বিয়া জিনিসটার ম্যালা ক্যাচাল আছে। না করলেও সমাজ বলবে তুমি খারাপ পাড়ায় যাও, আর করলে বলবে বউয়ের কথায় চলো।

সমাজের চুষ্টি গুদি তাই।

দুইদিন পরে, ভোমার ম্যারেজ এনেভার্সারিতে সদারে ফোন দিয়া সে সরি বলছে। ডিনারের দাওয়াত দিসে। আমি যামু কিনা চিন্তা করতেসি। দাওয়াতের ছদ্মবেশে এটা একটা ট্র্যাপ হইতে পারে। দেশে এই রকম মেটিকুল্যাস ডিজাইনের অনেক কিছু ঘটে গেছে। "সুই হইয়া ঢুইকা ফাল হইয়া বের হবার" ইতিহাস এই জনপদে অসংখ্য। আগে এদের নাম মিরজাফর আছিল। এখন অর্গানাইজার নাম নিসে।

আমি হালকার উপর চিপায় ঢুকে যেতে চাচ্ছি। দুই পক্ষের মারামারির মধ্যে থাকলে সমস্যা।

 


রাস্তা

পাশের বিল্ডিঙের  গ্যারেজে বাইক রাখি। নিজেরটা ভাড়া দেয়া। এইটারে বলে বিজনেস। গ্যারেজে বাইক রাখতে গিয়া দারোয়ান সাম এর সাথে দেখা। এইটারে দেখলেই আমি দ্রুত এলাকা থেকে ভাগতে চাই। শালা সারাদিন বিড়ি খায় আর আমারে দেখলেই চা-নাস্তার জন্য পঞ্চাশ-একশ টাকা দাবি করে। 

এই বিল্ডিঙে দুইজন দারোয়ান আছে - একজন সাম আরেকজন দিলীপ। দিলীপ কিছুটা ভালো আর ভদ্রলোক। তার কোন দাবি-দাওয়া নাই। সারাদিন টুলে বসে ঝিমানোই তার কাজ।

তবে সাম কিছুটা বদ প্রকৃতির। সে বিড়ি খায় এবং সকাল বেলা ঘুমায়। আমি বাইক ওয়াশ করে আনলেও, সে বলবে, "বস, মুইছা পরিষ্কার করে রাখসি। চা-নাস্তা খাওয়ার টাকা দিবেন।"

ধোয়া শার্ট আবার ধুইয়া, কেউ পয়সা চাইলে কেমন লাগে? এরে মাসুদরে দিয়ে কেলানি দিলে ভালো লাগত!

কাঁটাবনে যাচ্ছিলাম। রিকশয়ায় এক নব্য দম্পতি। অটোরিকশা গাড়ির লেইন দিয়া সুপার স্পিডে যাচ্ছে। তারে বেশ কয়েকবার হর্ন দিলাম সাইড দেয় না। আমি সামনে গিয়ে পাশ থেকে সুপার স্পিডে তারে একটু ভড়কে দিলাম।

পিছন থেকে আমারে "বানচোত... বলে গালি দিলো মনে হল। হেলমেট থাকায় ঠিক শুনতে পেলাম না।" আবার একটু বাইক স্লো করে অপেক্ষা করলাম। এবার সে গাড়ির লেইন ছেড়ে এসেছে। আমারে দেখে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে আমি মধুর স্বরে জিগ্যেস করলাম, "হুজুর কি গালি দিয়েছেন?"

- তো এমনে বাইক চালায়?

আমি ঠিক নিশ্চিত না গালিটা কে দিয়েছে। অটোর সিটে বসা বেয়াক্কেলটাও দিতে পারে। আপু নিশ্চিত বাইঞ্চোত মার্কা গালি দিবে না। হাজার হোক তার নিজের বোন থাকতে পারে। আমি কোনভাবেই তার দুলাভাইয়ের মত দেখতে না। আপুর পাশে বসা ভাইয়াও দিতে পারে, আবার সফেদ দাড়িওয়ালা অটোচালকও হতে পারে। যারা অটো রিকশায় ওঠে তারা আসলে নিজের জীবনকে ভালোবাসে না। এরা অন্যকে কি ভালোবাসবে? এদের প্রেমে ভেজাল আছে।

তাইতো মহাকবি খাড়াটান বলেছেন, "যে নিজেকে ভালোবাসে না, সে অটো রিকশায় চড়ে।"

কিছু জ্ঞান দেবো ভাবছিলাম। কিন্তু অটো চালক থামতে নারাজ। সে আমাকে নরকের অভিশাপ দিতে দিতে চলে গেলো। এই সপ্তাহে কিছু পূন্য কামাইসিলাম, সেটা কাটাকাটি হয়ে গেলো। যাক... বাংলাদেশ বেশি পুণ্যবান মানুষের থাকার জায়গা না। এইটা ভদ্রলোকদের জন্য জাহান্নাম।

দেশ স্বাধীন হইলে কি হয় আমি জানি না, এখনও কোন পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না। তবে এই অটো-চালকরা স্বাধীনতা উপভোগ করছে। রাস্তায় মানুষের থেকে এদের সংখ্যা বেশি।

রাস্তার পাশে বাইক ধোয়ার জন্য মেলা দোকান আছে কাঁটাবনে। আমার পরিচিত একটা দোকানও আছে। সেখানে বাইক থামিয়ে বললাম, ওয়াশ করো।

- ভাই, বাইক তো পরিষ্কারই আছে।
- তাও করো।
- ওকে বস। সে বেজার মুখে পানির হোস আর সাবান আনতে গেলো। তার মুখ বেজার কারন মোবাইলে পাবজি খেলতেসিল। খেলায় ডিস্টার্ব হইসে।

পোলাপান প্রচন্ড বেয়াদব। এদের উন্নতি হবে না। ঠিক মত কাজ করলে আজকে বাইক ধুচ্ছিস, কালকে এরোপ্লেন ধুবি। ভাগ্যের কথা কে বলতে পারে? অভিজ্ঞতা এখন কোন বিষয় না। ভাগ্যে থাকলে তুই দেশের রাজাও হয়ে যেতে পারিস।

ছেলেটা বদ আছে। যখনই রাস্তার পাশ দিয়ে, মানুষ বা রিকশা যাচ্ছে সে পানি দিয়ে তাদের ভিজিয়ে দিচ্ছে। আমি তারে মানা করলাম সে শুনলো না। এরপর মোবাইলে তার ভিডিও করে রাখলাম। একে ভাইরাল করে দিতে হবে।

আজকাল যে ভাইরাল হবে সেই মারা খাবে। জাস্টিস বলে কিছুতো থাকতে হবে! দেশে আইন নাই, কিন্তু ফেইসবুক তো আছে!

তবে আমি ঠিক করেছি আজকে থেকে আবার ভদ্রলোক হয়ে যাবো। রাস্তঘাটে রিকশা আর অটোওয়ালাদের খিস্তি দেব না। হাজার হোক এই শহরটা তাদের। আর গরীবের কোন পাপ হয় না।

রুমি বলেছিল, সবার সাথে যুদ্ধ করার থেকে, নিজের ইগোকে মেরে ফেলো। আমি সেই ইগোকে খুঁজছি। পাইলেই খতম!


- - জনৈক বাইকার