যাচ্ছে জীবন

কক্সবাজার গিয়া সদানন্দরে বললাম "মাল খাবো"। সে জিহবায় কামড় দিয়া বললো "হারাম"। কোনভাবেই বারে নেয়া গেলো না তাকে। শেষ পর্যন্ত রুমে অর্ডার দিয়া আমি আর ভোমা ককটেল খাইলাম।

পুরাটা সময় সদানন্দ বইসা বইসা মোবাইল গুতাইলো আর আমাদের দিকে জাহান্নামী লুক দিলো।

সদানন্দরে নিয়া ঘোরার একটা ঝামেলা আছে। সে নিজে যা ভাল মনে করে সেটার উপরে আর কারো কিছু বিশ্বাস করে না। এমন এমন রেষ্টুরেন্টে নিয়া গেল খাইতে সেগুলায় আমি মুতার জন্যও যাইতাম না।

আমার সন্দেহ হইতাসে তারে মনে হয় রেষ্টুরেন্ট এর মালিক কমিশন দেয়।

দুইদিনের বেশিরভাগ সময়ই সে রুমে ঘুমাইয়া কাটাইসে, আর অল্প কিছুক্ষন তার জলহস্তীর মতন দেহ নিয়া সুইমিংপুলে ভাইসা ছিলো।

সুইমিং পুলে আবার মেলা নিয়ম কানুন, সেইখানে সুতি জামাকাপড় পইরা নামা যাবে না। শাড়ি আর বোরখা পইরা নামা যাবে না। এক ভাইজান ফুল ফ্যামিলি বোরখা নিয়া নাইমা পড়ল। ব্যাপক একটা ঝগড়া কইরাও পুলের এটেন্ডেন্ট তাদের তুলতে পারল না। ইসলামিক ড্রেস বাদে তারা পুলে নামবে না।

আমি মনে মনে কইলাম "খাইসে"। সদানন্দ একটা টি-শার্ট পরা ছিল।

- স্যার এটা পরে নামা যাবে না।
- এটা পলিস্টারের ব্রো। রঙ উঠবে না। সদানন্দ ঢাহা মিথ্যা কথা বলল।

এটেন্ডেন্ট মন খারাপ করে চলে গেল। মনে মনে গালি দিলেও মুখে কিছু বলা যাবে না।

- তুই জাহান্নামী।
- ক্যান? এইটাতো পলিস্টারই।
- তুই হাফপ্যান্ট পইরা নামসস। তোর হাঁটু দেখা যায়।

পুলের টাওয়েল নিয়া আবার রুমে যাওয়া যাবে না।

- ক্যান, আমি কি ন্যাংটা যামু, নাকি এই ভিজা কাপড়েই যামু?
- না স্যার, এখানে শাওয়ার আছে। শাওয়ার নিয়ে ড্রেস চেইঞ্জ করে যাবেন।
- বালের নিয়ম বানাইসো? দেশের এই দূর্দিনে আমরা পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে টাকা খরচ করতেসি এইগুলা দেখার জন্য?

- স্যার, আমাদের এইখানে এরকমই নিয়ম। এটেন্ডেন্ট আমারে বলল।
- এক কাম করেন হোটেলে ঢুকলে একটা ইউনিফর্ম দিয়া দেন। আমরা লেফট-রাইট করতে করতে ক্লাস করি।

এটেন্ডেন্ট তার মেকি হাসি দিয়ে চলে গেলো।

আসার সময় সদানন্দ বস্তা ভইরা শুটকি কিনসে। তারে একবার বলসিলাম, শুটকি খাইস না এগুলায় ক্যামিক্যাল আছে। তোর লিভার, কিডনি দুচে দেবে। সদানন্দ জানাইসে, এইগুলা গিফট করে দেবো। মরলে আরেকজন মরুক। সে ভেজিটেরিয়ান।

এইরকম ইউনিক ক্যারেকটার হইলেও একটা দিক দিয়া সে ভালো, সে কখনো বন্ধুবান্ধবের খারাপ চায় না। আজ পর্যন্ত যতবার তারে বিপদে আপদে ডাক দিসি বুক পাইতা আইসা খাড়াইয়া গেসে। নিজের থেকে বুদ্ধি দেয়ার চেষ্টা করসে।

তার খারাপ দিক হইল, সে নিজেরে সবার মত বড়লোক মনে করে, আমি দিন আনি দিন খাই টাইপের মানুষ। কিন্তু তার ধারনা আমি ম্যাল্যা টাকাটুকা কামাই।

চিন্তা করসি আগামী তিন মাস তার সাথে যোগাযোগ করব না। দেখা হইলেই পয়সা লস।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন