গণির পরোটার দোকান
নিচে নেমে দেখি মাসুদ একমনে মোবাইলে কি জানি দেখতেসে। আমি যে পেছনে চলে এসেছি সেটা সে খেয়ালই করে নাই। পেছনে গিয়া বললাম, "হালুম"।
হাতের মোবাইল পড়ে গেল তার ভয় পেয়ে।
- কি করো তুমি?
সামরিক কায়দায় আমাকে স্যালুট দিয়ে বলল, "কিছুনা, বস...।"
- মোবাইলে কি দেখিস, শালা?
- ৩৬ তারিখে নাকি নতুন স্বাধীনতা দিবস হবে, ফেইসবুকে তাই দেখতেসি। আমি লাইক কমেন্ট শেয়ার দিয়ে পাশে আছি।
আমি আক্ষরিক অর্থেই বোকাচু হয়ে গেলাম।
- তোমার বয়স ৪৬, তুমি গেঞ্জিদের সাথে পাল্লা দিয়া আন্ডারওয়্যার পরলে কি হবে? ইউ হ্যাভ টু বুঝতে হবে। নাদান কোথাকার।
- বস এটা নতুন বাংলাদেশ। আপনাদের দিন শেষ, এখন দেশ চালাবে তরুণরা।
- তুই তো বুইড়া ভাম, তুই কি চাস?
মাসুদ বিড়বিড় করে, "পনের বছর কই ছিলেন, ভাই?"
মাসুদের কান বরাবর একটা বন দিলাম। সে মাটিতে পড়ে উঠে আবার স্যালুট দিলো।
- পনের বছর তোর মত কুলাঙ্গাররে তিনবেলা খাওয়াইসি।
মেজাজটা অত্যধিক খারাপ হয়ে গেলো। জীবনে কোনদিন রাজনীতি করি নাই বলে আজকে দারোয়ান শালায়ও রাজনীতি শেখায়।
গনির দোকানের দিকে রওনা দিলাম। গিয়া আরো মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। গণি দোকানে নাই। তার ছোটভাইরে বসায় রাখসে। এই ছেলে চরম বেয়াদব, দেখলে সালাম দেয়না। আদাব-কানুন কিছু শেখে নাই। গেঞ্জি জেনারেশন।
- গণি ভাই কই?
- ভাইতো পরোটার দোকান দিসে। ওই যে পাশেই। এখন থেকে আমি এখানে বসি। চা দিমু, নাকি কফি।
- কফি-ই দাও। দেখি এইটা কোন মানের শরবত!
যাক সরকার পরিবর্তনে গণির তাইলে উন্নতি হইসে। ফ্যামিলি বিজনেস বাড়সে। আমি কফি হাতে গনির পরোটার দোকানে গিয়া বসলাম। গণিরে মহা খুশি দেখাচ্ছে।
- আসসালামুয়ালাইকুম, ভাই নাস্তা করসেন?
- নাহ। একটা পরোটা দাও দেখি কেমন হয়।
- সাথে মাংস দেই। লাল মাংস কষা আছে। আপনের লাইগা হাফ দাম।
- দাও। একপ্লেট ভাতও দিতে পারো।
- ভাততো ভাই দুপুরের আগে হবে না।
গণি বেয়ারা রাখসে, আট-নয় বছরের একটা ছেলে। সে এসে পরোটা আর মাংস দিয়ে গেলো। আমি কফিতে চুবিয়ে তেলতেলে পরোটা খাচ্ছি আর একটা একটা করে মাংসের পিস মুখে দিচ্ছি। আর দুই একজন কাষ্টমার আছে, এরা আমাকে সন্দেহের চোখে দেখছে। একেতো আমার চুল কয়েকদিন কাটা হয় নাই। তারউপর একটা থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট পরা। আর বুকের গেঞ্জিতে লেখা, "No Woman No Cry"। দেখতে মনে হয় ডাকাতের মত লাগতেসে আমারে।
- গণি ভাই ব্যবসা তো মনে হয় ভালোই যাইতেসে?
- নারে ভাই, আগেই মনে হয় ভাল আছিলাম।
আমি মাথা নাড়লাম। গণি তার স্বভাব সুলভ চরিত্রে শুরু করতে যাচ্ছে দেশ বন্দনা।
- এখনতো সব পলাতক, দোষ কারে দিবা?
- কপালের ভাই... কপালের।
- আবার কি হইসে? দেশে তো শান্তি কায়েম হইসে এখন।
- এরকম দেশ কি আমরা চেয়েছিলাম?
- আফসোস করো কেন? নতুন লোক নতুন দেশ, তাগোর টাইম দেও।
"হ, ভাই...।" গণি বিড়বিড় করে কি বলল বোঝা গেলো না। আমি খাওয়া শেষ করে টাকা না দিয়েই বের হয়ে গেলাম। গণির আফসোস কিছুটা বাড়ুক।