পোস্টগুলি

অক্টোবর, ২০২৪ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

গণির পরোটার দোকান

নিচে নেমে দেখি মাসুদ একমনে মোবাইলে কি জানি দেখতেসে। আমি যে পেছনে চলে এসেছি সেটা সে খেয়ালই করে নাই। পেছনে গিয়া বললাম, "হালুম"।

হাতের মোবাইল পড়ে গেল তার ভয় পেয়ে।

- কি করো তুমি? 

সামরিক কায়দায় আমাকে স্যালুট দিয়ে বলল, "কিছুনা, বস...।"
- মোবাইলে কি দেখিস, শালা?
- ৩৬ তারিখে নাকি নতুন স্বাধীনতা দিবস হবে, ফেইসবুকে তাই দেখতেসি। আমি লাইক কমেন্ট শেয়ার দিয়ে পাশে আছি।

আমি আক্ষরিক অর্থেই বোকাচু হয়ে গেলাম।

- তোমার বয়স ৪৬, তুমি গেঞ্জিদের সাথে পাল্লা দিয়া আন্ডারওয়্যার পরলে কি হবে? ইউ হ্যাভ টু বুঝতে হবে। নাদান কোথাকার।

- বস এটা নতুন বাংলাদেশ। আপনাদের দিন শেষ, এখন দেশ চালাবে তরুণরা।
- তুই তো বুইড়া ভাম, তুই কি চাস?

মাসুদ বিড়বিড় করে, "পনের বছর কই ছিলেন, ভাই?"

মাসুদের কান বরাবর একটা বন দিলাম। সে মাটিতে পড়ে উঠে আবার স্যালুট দিলো।

- পনের বছর তোর মত কুলাঙ্গাররে তিনবেলা খাওয়াইসি। 

মেজাজটা অত্যধিক খারাপ হয়ে গেলো। জীবনে কোনদিন রাজনীতি করি নাই বলে আজকে দারোয়ান শালায়ও রাজনীতি শেখায়।

গনির দোকানের দিকে রওনা দিলাম। গিয়া আরো মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। গণি দোকানে নাই। তার ছোটভাইরে বসায় রাখসে। এই ছেলে চরম বেয়াদব, দেখলে সালাম দেয়না। আদাব-কানুন কিছু শেখে নাই। গেঞ্জি জেনারেশন।

- গণি ভাই কই?

- ভাইতো পরোটার দোকান দিসে। ওই যে পাশেই। এখন থেকে আমি এখানে বসি। চা দিমু, নাকি কফি।
- কফি-ই দাও। দেখি এইটা কোন মানের শরবত!

যাক সরকার পরিবর্তনে গণির তাইলে উন্নতি হইসে। ফ্যামিলি বিজনেস বাড়সে। আমি কফি হাতে গনির পরোটার দোকানে গিয়া বসলাম। গণিরে মহা খুশি দেখাচ্ছে।

- আসসালামুয়ালাইকুম, ভাই নাস্তা করসেন?

- নাহ। একটা পরোটা দাও দেখি কেমন হয়।

- সাথে মাংস দেই। লাল মাংস কষা আছে। আপনের লাইগা হাফ দাম।

- দাও। একপ্লেট ভাতও দিতে পারো।

- ভাততো ভাই দুপুরের আগে হবে না। 

গণি বেয়ারা রাখসে, আট-নয় বছরের একটা ছেলে। সে এসে পরোটা আর মাংস দিয়ে গেলো। আমি কফিতে চুবিয়ে তেলতেলে পরোটা খাচ্ছি আর একটা একটা করে মাংসের পিস মুখে দিচ্ছি। আর দুই একজন কাষ্টমার আছে, এরা আমাকে সন্দেহের চোখে দেখছে। একেতো আমার চুল কয়েকদিন কাটা হয় নাই। তারউপর একটা থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট পরা। আর বুকের গেঞ্জিতে লেখা, "No Woman No Cry"। দেখতে মনে হয় ডাকাতের মত লাগতেসে আমারে।

- গণি ভাই ব্যবসা তো মনে হয় ভালোই যাইতেসে?

- নারে ভাই, আগেই মনে হয় ভাল আছিলাম।

আমি মাথা নাড়লাম। গণি তার স্বভাব সুলভ চরিত্রে শুরু করতে যাচ্ছে দেশ বন্দনা।

- এখনতো সব পলাতক, দোষ কারে দিবা?

- কপালের ভাই... কপালের।

- আবার কি হইসে? দেশে তো শান্তি কায়েম হইসে এখন।

- এরকম দেশ কি আমরা চেয়েছিলাম?

- আফসোস করো কেন? নতুন লোক নতুন দেশ, তাগোর টাইম দেও।

"হ, ভাই...।" গণি বিড়বিড় করে কি বলল বোঝা গেলো না। আমি খাওয়া শেষ করে টাকা না দিয়েই বের হয়ে গেলাম। গণির আফসোস কিছুটা বাড়ুক।


যাচ্ছে জীবন

কক্সবাজার গিয়া সদানন্দরে বললাম "মাল খাবো"। সে জিহবায় কামড় দিয়া বললো "হারাম"। কোনভাবেই বারে নেয়া গেলো না তাকে। শেষ পর্যন্ত রুমে অর্ডার দিয়া আমি আর ভোমা ককটেল খাইলাম।

পুরাটা সময় সদানন্দ বইসা বইসা মোবাইল গুতাইলো আর আমাদের দিকে জাহান্নামী লুক দিলো।

সদানন্দরে নিয়া ঘোরার একটা ঝামেলা আছে। সে নিজে যা ভাল মনে করে সেটার উপরে আর কারো কিছু বিশ্বাস করে না। এমন এমন রেষ্টুরেন্টে নিয়া গেল খাইতে সেগুলায় আমি মুতার জন্যও যাইতাম না।

আমার সন্দেহ হইতাসে তারে মনে হয় রেষ্টুরেন্ট এর মালিক কমিশন দেয়।

দুইদিনের বেশিরভাগ সময়ই সে রুমে ঘুমাইয়া কাটাইসে, আর অল্প কিছুক্ষন তার জলহস্তীর মতন দেহ নিয়া সুইমিংপুলে ভাইসা ছিলো।

সুইমিং পুলে আবার মেলা নিয়ম কানুন, সেইখানে সুতি জামাকাপড় পইরা নামা যাবে না। শাড়ি আর বোরখা পইরা নামা যাবে না। এক ভাইজান ফুল ফ্যামিলি বোরখা নিয়া নাইমা পড়ল। ব্যাপক একটা ঝগড়া কইরাও পুলের এটেন্ডেন্ট তাদের তুলতে পারল না। ইসলামিক ড্রেস বাদে তারা পুলে নামবে না।

আমি মনে মনে কইলাম "খাইসে"। সদানন্দ একটা টি-শার্ট পরা ছিল।

- স্যার এটা পরে নামা যাবে না।
- এটা পলিস্টারের ব্রো। রঙ উঠবে না। সদানন্দ ঢাহা মিথ্যা কথা বলল।

এটেন্ডেন্ট মন খারাপ করে চলে গেল। মনে মনে গালি দিলেও মুখে কিছু বলা যাবে না।

- তুই জাহান্নামী।
- ক্যান? এইটাতো পলিস্টারই।
- তুই হাফপ্যান্ট পইরা নামসস। তোর হাঁটু দেখা যায়।

পুলের টাওয়েল নিয়া আবার রুমে যাওয়া যাবে না।

- ক্যান, আমি কি ন্যাংটা যামু, নাকি এই ভিজা কাপড়েই যামু?
- না স্যার, এখানে শাওয়ার আছে। শাওয়ার নিয়ে ড্রেস চেইঞ্জ করে যাবেন।
- বালের নিয়ম বানাইসো? দেশের এই দূর্দিনে আমরা পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে টাকা খরচ করতেসি এইগুলা দেখার জন্য?

- স্যার, আমাদের এইখানে এরকমই নিয়ম। এটেন্ডেন্ট আমারে বলল।
- এক কাম করেন হোটেলে ঢুকলে একটা ইউনিফর্ম দিয়া দেন। আমরা লেফট-রাইট করতে করতে ক্লাস করি।

এটেন্ডেন্ট তার মেকি হাসি দিয়ে চলে গেলো।

আসার সময় সদানন্দ বস্তা ভইরা শুটকি কিনসে। তারে একবার বলসিলাম, শুটকি খাইস না এগুলায় ক্যামিক্যাল আছে। তোর লিভার, কিডনি দুচে দেবে। সদানন্দ জানাইসে, এইগুলা গিফট করে দেবো। মরলে আরেকজন মরুক। সে ভেজিটেরিয়ান।

এইরকম ইউনিক ক্যারেকটার হইলেও একটা দিক দিয়া সে ভালো, সে কখনো বন্ধুবান্ধবের খারাপ চায় না। আজ পর্যন্ত যতবার তারে বিপদে আপদে ডাক দিসি বুক পাইতা আইসা খাড়াইয়া গেসে। নিজের থেকে বুদ্ধি দেয়ার চেষ্টা করসে।

তার খারাপ দিক হইল, সে নিজেরে সবার মত বড়লোক মনে করে, আমি দিন আনি দিন খাই টাইপের মানুষ। কিন্তু তার ধারনা আমি ম্যাল্যা টাকাটুকা কামাই।

চিন্তা করসি আগামী তিন মাস তার সাথে যোগাযোগ করব না। দেখা হইলেই পয়সা লস।