শামীম ভাই সমাচার
শামীম ভাইরে দেখলেই আমি টুপ করে কোন একটা গলিতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করি। বয়সে আমি তার হাঁটুর সমান। তার বয়স ৬০ এর উপরে। কিন্তু প্রতিদিন সকালে তিনি জগিং করতে বের হন। সাদা একটা ট্রাউজার আর ঘিয়া কালারের টি-শার্ট পরে।
এই বয়েসের লোকজনরে সাধারণত আমার চাচা বলে ডাকার কথা। কিন্তু আমি যেহেতু ঘাউরা কিসিমের, আমি কাউরে স্যার বা আংকেল বইলা ডাকি না। আমার কাছে সবাই ভাই। যত মুরুব্বিই হোক আমি ভাই ডাকি। অতীতে দেখেছি, কাউরে চাচা ডাকা মাত্র সে আমারে দেখা হইলে এমনভাবে ভাইস্তা বলে ডাক দেয় যেন আমি মাত্র দুধ খাইয়া উঠছি।
আর সবচেয়ে বড় কথা, মুসলিম-মুসলিম ভাই ভাই। আমি এই নীতি মাইনা চলি।
শামীম ভাইয়ের কথা বলতেসিলাম। একদিন গনির দোকানে দাঁড়ায়া চা-ব্রি সেবন করতেসিলাম। শামিম ভাই আইসা বললেন- "তোমারে চেনা চেনা লাগে।" এইটা হইল কথা জমানোর ধান্দা। বিড়ি খাবার সময় আমি সাধারণত কাউরে চিনি না। অতীতে চিনতে দিয়া পস্তাইসি। এক মালব্রোর দাম ১৮ টাকা এখন আর চা ১০ টাকা। কাউরে চিনা ফেললেই ২৮ টাকা লস।
- হইতে পারে, এলাকায় জন্মের পর থেকে আছি।
শামীম ভাই আমার কথায় মাইন্ড করলেন না। তিনি আইছেন গল্প জমাইতে।
- বাচ্চারে স্কুলে দিয়া আসলা?
- আসলাম, আপনেও কি বাচ্চারে স্কুলে দিসেন? আপনার বাচ্চা কোন স্কুলে পড়ে?
- বাচ্চা না, আমার নাতনীরে দিয়া আসি মাঝে মধ্যে।
- ও... আমি কিছুটা বুকাচু হইয়া গেলাম। কি বলব খুঁজে পাই না।
এরপর ম্যালাদিন তার সাথে চা-ব্রি সেবন কালে দেখা হইসে। তিনি আমারে একদিন জোর কইরা তার বাসায় নিয়া গেলেন। চা কম খাই বলার পরেও, তার বাসায় বইসা চা আর ব্রি খাওয়াইলেন। নিজের বাড়িঘর দেখাইলেন। এই পর্যন্ত সমস্যা ছিলো না।
কিন্তু তিনি আমারে বিকালে বা সন্ধ্যায় দেখা করতে বলেন। আড্ডা দেয়ার জন্য। বয়স চল্লিশ হবার পরে আমি সাধারণত আড্ডা কম দেই। আমার চেহারায় বালকসুলভ একটা বিষয় আছে। দেখতে ইনসেন্ট লাগে। এই রকম একটা বুইড়ার সাথে আড্ডা দিলে আমার চলে?
তারওপর তিনি সর্বদা আমার পরিবারের কথা জিগ্যেস করেন, কে কোথায় আছেন, কেমনে আছেন, আমি কি করি ইত্যাদি। আমি কত ইনকাম করি - তার এই প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে আমি ক্লান্ত।
তিনি দেশ স্বাধীন হবার আগে, মোবাইলে এলাকার কোন এম্পির লগে তার ছবি আছে, কোন কমিশনারের লগে তার অবৈধ রিলেশন সেগুলা আমারে দেখাইসিলেন। দেশ স্বাধীনের পরে আর দেখান নাই। এই বিষয়ে আমি মাইন্ড খাইসি।
মেলা দিন পর তার সাথে আবার দেখা হইসিলো সেদিন। ফার্মেসির সামনে টুলে বইসা আছেন। জগিং ড্রেস, সেই গোল্ড ফ্রেমের চশমা।
জিগাইলাম "কেমন আছেন?"
- তুমার তো মিয়া কোন খবর নাই।
- আছিলাম একটু দৌড়ের উপর। আমি বিস্তারিত বলতে চাই না। এমন রিমঝিম বৃষ্টির সকালে তার সাথে দেখা হওয়া মানেই এক ঘন্টা নষ্ট।
- বইসা আছেন কেন? আজকে জগিং করবেন না?
- নাহ পায়ে ব্যাথা পাইসি। অটো রিকশা থেকে পইড়া গেসিলাম।
- হ... শালারা মা..দা.। আমি পুরা বাক্য শেষ করলাম না। তিনি জান্নাত হোটেলে আমারে চা খাওয়াইতে নিয়া গেলেন। আমি চায়ের বিল দিয়া দিলাম। মাগনা খাইতে ভালো লাগে না।
আমি আসলে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি দেইখা আসছিলাম চিকেন খিচুড়ি কিনতে। আড্ডা আরোও জমতে পারত কিন্তু আমার খিচুড়ি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। ক্লায়েন্টের সাথে জরুরী মিটিং আছে বইলাল আমি পার হয়া গেলাম।
যাবার সময় তিনি তার সেই সদা হাসসোজ্জ্যল ভঙ্গিতে জিগ্যেস করলেন, আমারে ইয়াং লাগতেসে না?
কি আর কমু! কইলাম, আপনে এমনেই দেখতে সুন্দর। একটা রিচার্ড গিয়ার টাইপ লুক আছে। ইয়াং হইয়া কি করবেন?
মানুষ নিয়ে গবেষণা করা এই আমি এখনো তারে ঠিক ধইরা উঠতে পারি নাই। তিনি মানসিক ভাবে সুস্থ, কিন্তু নিঃসঙ্গ একজন মানুষ এইটা বুঝতে পেরে আমার মাঝে মাঝে মায়া হয়। তার থেকে আমি পালিয়ে বেড়াই কারন তিনি বেশি কথা বলেন আর নিজের সম্পর্কে আমি বেশি কথা বলা পছন্দ করি না। আমার কোন এক গল্পে তারে টুক কইরা ঢুকাইয়া দিব।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন