পথের মানুষ

বিকেলে গুলশান গিয়েছিলাম দেশের অবস্থা দেখতে। সব জায়গায় গর্ত থেকে পিলপিল করে মানুষ বের হয়ে আসছে। এতদিন কেউ কিছু বলতে পারে নাই, কারন স্বৈরাচার ছিল। এখন দেশ আবার স্বাধীন হয়েছে। সবার মনে প্রচুর আনন্দ।

স্বাধীন মানে পুরাই স্বাধীন, কেউ বাধা দেয়ার নাই। যার যেখানে খুশি যাচ্ছে, যেভাবে খুশি চিল্লাচ্ছে। গতকালই মাত্র প্রধানমন্ত্রী দেশ ত্যাগ করেছেন ছাত্রদের তোপের মুখে পড়ে। জনতা বঙ্গভবনে গিয়ে যে যা পেরেছে তুলে নিয়ে এসেছে। হাজার হোক দেশটা কারো বাপের না, এগুলো তাদেরই সম্পত্তি। আর যুদ্ধ বিজয়ের পর গনিমতের মালের সদ্ব্যবহার করাটা খুব জরুরী।

আমি অবশ্য আজকে গিয়ে ঢুকতে পারি নাই। আর্মির পোষাক পরা লোকজন কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না। আমি বলে এসেছি, তুমি ভুয়া আর্মি। আমার মালামাল ভিতরে আছে, আমি পাই নাই। পরকালে তোমাকে এর জন্য জবাব দিতে হবে। 

সে কঠিনভাবে আমার দিকে তাঁকাল। আমি তাতে না দমে তাকে জীব দিয়ে ভেঙ্গচি কাটলাম। নতুন সরকার আসলে নিশ্চই আমাকে আমার ভাগ বুঝিয়ে দেবে।

হেঁটে হেঁটে বিজয় স্মরণী আসলাম। আসার পথে দেখলাম একটা দোকানে ভাঙচুর চলতেসে। একেক জন যা পারতেসে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আমি সাহস করে কাছে যেতেই একজন একটা রাইস কুকার ধরিয়ে দিলো হাতে, বলল এইখানে দাড়াঁন আমি আরেকটা নিয়া আসি। 

আমি বিজয়ীর ভঙ্গীতে রাইস কুকার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এরমধ্যে একজন এসে ফট করে একটা ছবি তুলে ফেলেছে।

- ভাই কি করেন আপনি?
- ভাত রান্ধি...।
- মানে... আপনার হাতে রাইস কুকার কেন?
- দোকানদার নাই, তাই সেলসম্যান আমার কাছে দিয়ে গেছে। বিক্রি করব, একদাম ২৪০০ টাকা।
- দোকানদার কই গেছে, আমরা দেখতে পারছি সবাই ভাঙচুর চালাচ্ছে। এটাই কি ছাত্র আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিলো?

এতক্ষনে দেখলাম তার পিছনে একজন ক্যামেরা হাতে দাঁড়ায়া আছে। আমি পোজ দিয়ে দাঁড়ালাম।

- আন্দোলন আন্দোলনের জায়গায়, গণিমতের মাল, গণিমতের জায়গায়। এইগুলা আমার ট্যাক্সের টাকায় কেনা না?

- কিন্তু এভাবে জিনিসপত্র ভাঙচুর করাটা অনৈতিক মনে হচ্ছে না?

- আপনার কাছে বেচবো না। আপ্নে কালা দল।

আমি রাইস কুকার নিয়ে হাঁটা দিলাম। ক্যামেরা ম্যান আরেকজনরে ধরতে ছুটছেন। যার যার কাজ, তার তার ধর্ম।

গনির দোকানে গিয়া এইটা গণিরে গছায়া দিতে হবে। বসায় রাইস কুকার নিয়ে গেলে আব্বার হাতে প্যাদানি খাইতে পারি।

গণি অবশ্য মহাসুখে থাকার কথা, আম্লিগের পতন হইসে। সে অবশ্য সবসময়ই সরকার বিরোধী। যে সরকারই আসুক তার পুটু মেরে যায়। 

গণি দোকান খুলে বেজার ভাবে বসে আছে। কাস্টমার কম।

- কি খবর গনি ভাই। মন উদাস কেন?

- দেশের কি হইব চিন্তা করি বড় ভাই।
- চিন্তা ভাবনা ছাড়ো আর শরবত বানাও।
- শরবত?
- মানে চা দ্যাও।

গণি চা বানাতে গিয়ে আবার উদাস হয়ে গেলো।

- এই যে প্রাইমিনিষ্টার পলায়া গেলো, এখন ইন্ডিয়ান আর্মি নাকি আমাগো দেশ দখল করব? "র" নাকি চইলা আসছে?
- বাল গেছে, এখন কাকু আসবে। তুমি গণি গণিই থাকবা। টেনশন নিয়ো না। 

- না টেনশন কিসের? দোকান খুলতে পারিনা ঠিকমত, ব্যবসাপাতি ভাল না।
- তোমাকে একটা ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করে দিবো। নতুন সরকার মেলা বড়লোক্স।

- আমি ঋণ দিয়া কি করুম?
- কি আর করবা, চায়ের সাথে ভাতও বেচবা। আর এই যে নাও তোমার জন্য রাইস কুকার আনসি। একদম আমেরিকান মাল ইনটেক। আর, আমার আগের বাকির হিসাব ক্লোজ, রাইস কুকারের দাম ২৪০০ টাকা। তোমারে ডিসকাউন্টে দিলাম।

গণি খুশি হইল নাকি বেজার বুঝলাম না। আসলে গরিবের উপকার করতে নাই। এরা সারাজীবন গরীবই থাকে।

মাসুদরে কাল থেকে খুঁজে পাচ্ছি না। সে নাকি যুদ্ধে অংশগ্রহন করতে গেছে। দেখা হইলে কিছু উপদেশ খয়রাত দিতে হবে। নিজের কেল্লা অরক্ষিত রাইখা সে কি করতে গেছে জানতে হবে।


মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন