পোস্টগুলি

আগস্ট, ২০২৪ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

মাসুদ বিরিয়ানি হাউস

মাসুদের দেখা নাই তিনদিন। সেই যে দেশ স্বাধীনের আন্দোলন হইল, তখন তারে একটু কানমলা দিসিলাম। সেই দুঃখে সে আমার সামনে কয়েকদিন আসে নাই। তবে সিসি ক্যামেরাতে আমি ঠিকই দেখতাম সে পাশের বাড়ির দারোয়ান আর সামনের দোকানের কর্মচারীর সাথে রাস্তায় দাঁড়ায়া সিগারেট খাইতেসে। 

আমারে দেখলেই টুস কইরা লুকাইয়া যায়। যাক, গেইট পাহারায় থাকলেই হলো। যদি চোর আসার পর লুকাইয়া যায় তাইলেই সমস্যা।

কয়দিন সে ডাকাত ডাকাত খেলসে। রাতে সে এমনিতেই ঘুমায় কিন্তু কয়দিন ডাকাত ধরার নাম করে ফুর্তি করসে এলাকায় ঘুরে ঘুরে। পরে শুনেছি সে নাকি রাজনৈতিক দল খোলার চেষ্টা করছে। তাই তারে একটা কানমলা দিসিলাম। সে তখন থেকেই আমারে দেখলেই পালিয়ে যায়।

এরপর একদিন সে আমার কাছে অগ্রিম একমাসের বেতন দাবি করল। দাবি আদায় না হলে নাকি সে বাসার সামনে আমরন অনশন করবে।

আমি তারে বললাম, তোমার দাবি মেনে নেয়া হল। তবে অনশন জারি রাখো। তোমাকে খাবার দেয়া আর কুত্তাকে খাবার দেয়া একই কথা।

মাসুদ অবশ্য রাগ করে নাই। তার সাথে কুত্তার কিছুটা মিল আছে। একমাসের বেতন হাতে পাইয়া সে লাপাত্তা। এবার ফিরুক তারে  কুত্তা দিয়া ডলা দিতে হবে।

এদিকে হাতিরপুলে গিয়ে একদিন দেখি বিরিয়ানির দোকানের নাম "মাসুদ বিরিয়ানী হাউজ।" আমার খুব কষ্ট লাগল। মাসুদ বিরিয়ানির দোকান দিসে অথচ আমারে জানায় নাই। 

এই দোকানে ঢুকে আমি ফ্রিতে বিরিয়ানি চাইলাম, কাউণ্টারের বসা ক্যাশিয়ার আমাকে বিরিয়ানি দিতে চাইলো না। 

- আমি মাসুদের বস। এটা মাসুদের বিরিয়ানির দোকান না?
- আমিই মাসুদ। আপনে আমার বস হইলেন ক্যামনে?
- ওহ... তুমি ভুয়া মাসুদ। আমি আসল মাসুদের বস।
- যেই মাসুদেরই বস হন, বিরিয়ানি ফ্রিতে দেই না। শুধু মাত্র গরীবদের জন্য ফ্রি।
- তুই আমাকে গরীব বলিস? জানিস ঢাকা শহরে আমার তিনটা বাড়ি আছে? চিনস আমারে?

- আমি কখন আপনেরে গরীব বললাম। আপনে মানুষটা ম্যালা ক্যাচাইল্লা। ব্যবসার সময় ঝামেলা করেন না। চাঁদা নিতে আসছেন?
- না, তুই ফ্রি বিরিয়ানি খাওয়াবি। আমি কি গরীব যে তোর কাছ থেকে চাঁদা নিবো?
- তুই তোকারি করেন ক্যান। আপনে বিম্পির লোক?
- কি বললি?

- আচ্ছা ক্যঁচাল কইরেন না। ওই টেবিলে গিয়া বসেন আমি বিরিয়ানি পাঠাইতেসি। বুঝছি।

আমি ফ্রিতে তিন প্লেট বিরিয়ানি খেলাম। আসার সময় ক্যাশিয়ারের কাছ থেকে ঝাড়ি দিয়ে ১০০ টাকা রিকশা ভাড়া নিলাম। বেচারা সরু চোখে আমারে দেখতেসে। 

- চিন্তা করিসনা, সামনের ইলেকশনে তোকে একটা কমিশনার পদ দিব।

ক্যাশিয়ার বিড়বিড় করে কিছু বলল মনে হয়, আমি শুনতে পেলাম না।

দেশের অবস্থা ভালো না। কে যে কি উদ্দেশ্যে আসে বোঝা যায় না।

মাসুদরে একদিন এখানে নিয়া আসতে হবে। বিরিয়ানি রান্নাটা বেশি ভালো হয়নি। বাবুর্চির পাছা বরবর একটা লাথি দিতে হবে। মাসুদকে দেখাতে হবে রাজনীতি না করে ব্যবসা করাটা ভালো। হালাল পথে উপার্জন।

রিসোর্ট

সদানন্দের উপর মেজাজ মহা খাপ্পা হইসে। শালায় রিসোর্টে যাবে ঠিক করসে। তিনজন মিলা গেলে ঠিক ছিল সাথে বউ বাচ্চারেও যুক্ত করসে। এই কারনে ভোমার কাছে তার নামে নালিশ দিলাম। ভোমা নিজেও দেখি কিছু বলে না। সদার লগে তালে তাল মিলাইতেসে। সাথে আমার বউরেও ভাও করসে। বউ দুইবার আইসা বললে গেসে কেমনে যাবে।

মনডা চায় হালার বিচি বরবর একটা উড়ন্ত চুম্বন দিতে।

আমি বুঝাইতে চাইলাম, দেশের এই অবস্থায় ফূর্তি করতে যাওয়া ঠিক না। আর বউ বাচ্চা নিয়া গেলে সেটারে আনন্দ বলে না। সেটা পিকনিক। তারচেয়ে এই টাকাটা বন্যার্তদের দিয়ে দেয়া উচিত।

আমি জিগাইলাম, কি রিসোর্ট?
সদায় কয়, ফাইভ স্টার।
- সুইমিংপুল আছে?
- আছে।
- বার আছে?
- না নাই।

আমি ঘোষনা দিলাম, এইডা আমার বালের ফাইভ স্টার। একটা গর্ত খুইড়া পানি দিলেই যেমন সুইমিংপুল হয় না। ওইটারে পুকুর বলে। তেমনি যেই রিসোর্টে লালপানির ব্যবস্থা নাই, ঐটা একটা পিকনিক স্পট।

- তুই একটা বালেশ্বর।
- যেই বালই হই, আমার কাছে টাকা নাই।
- টাকা নিয়া কি কবরে যাবি? ভোমায় এতক্ষনে মুখ খুলসে।
- কবরে যামু না, তবে টাকা থাকলে চল্লিশায় ভালো খানাদানা পাকানো যাবে।
- তুই একটা ঘাউরা।
- ঘাউরামির কি দেখসস...। সুইমিং পুলে নাইমা ইয়ে করে দিব যখন তখন সেখানে গোসল করিস। 

- নাটক বাদ দিয়া চান্দা দে।
- টাকা নাই, কিস্তিতে দিতে হবে। পারলে আমারে একটা ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্তা করে দে। দেশ ও দশের উপকারের জন্য রিসোর্টে গিয়া ইবাদত করব।

- যাবি তাইলে?
- যামু, এক শর্তে। আমি ৫০১ নাম্বার রুমের বুকিং চাই।

ধুর বাল। ভাল্লাগে না। সদানন্দ বিরক্ত হয় আর ভোমায় মুচকি হাসে।



পথের মানুষ

বিকেলে গুলশান গিয়েছিলাম দেশের অবস্থা দেখতে। সব জায়গায় গর্ত থেকে পিলপিল করে মানুষ বের হয়ে আসছে। এতদিন কেউ কিছু বলতে পারে নাই, কারন স্বৈরাচার ছিল। এখন দেশ আবার স্বাধীন হয়েছে। সবার মনে প্রচুর আনন্দ।

স্বাধীন মানে পুরাই স্বাধীন, কেউ বাধা দেয়ার নাই। যার যেখানে খুশি যাচ্ছে, যেভাবে খুশি চিল্লাচ্ছে। গতকালই মাত্র প্রধানমন্ত্রী দেশ ত্যাগ করেছেন ছাত্রদের তোপের মুখে পড়ে। জনতা বঙ্গভবনে গিয়ে যে যা পেরেছে তুলে নিয়ে এসেছে। হাজার হোক দেশটা কারো বাপের না, এগুলো তাদেরই সম্পত্তি। আর যুদ্ধ বিজয়ের পর গনিমতের মালের সদ্ব্যবহার করাটা খুব জরুরী।

আমি অবশ্য আজকে গিয়ে ঢুকতে পারি নাই। আর্মির পোষাক পরা লোকজন কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না। আমি বলে এসেছি, তুমি ভুয়া আর্মি। আমার মালামাল ভিতরে আছে, আমি পাই নাই। পরকালে তোমাকে এর জন্য জবাব দিতে হবে। 

সে কঠিনভাবে আমার দিকে তাঁকাল। আমি তাতে না দমে তাকে জীব দিয়ে ভেঙ্গচি কাটলাম। নতুন সরকার আসলে নিশ্চই আমাকে আমার ভাগ বুঝিয়ে দেবে।

হেঁটে হেঁটে বিজয় স্মরণী আসলাম। আসার পথে দেখলাম একটা দোকানে ভাঙচুর চলতেসে। একেক জন যা পারতেসে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আমি সাহস করে কাছে যেতেই একজন একটা রাইস কুকার ধরিয়ে দিলো হাতে, বলল এইখানে দাড়াঁন আমি আরেকটা নিয়া আসি। 

আমি বিজয়ীর ভঙ্গীতে রাইস কুকার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এরমধ্যে একজন এসে ফট করে একটা ছবি তুলে ফেলেছে।

- ভাই কি করেন আপনি?
- ভাত রান্ধি...।
- মানে... আপনার হাতে রাইস কুকার কেন?
- দোকানদার নাই, তাই সেলসম্যান আমার কাছে দিয়ে গেছে। বিক্রি করব, একদাম ২৪০০ টাকা।
- দোকানদার কই গেছে, আমরা দেখতে পারছি সবাই ভাঙচুর চালাচ্ছে। এটাই কি ছাত্র আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিলো?

এতক্ষনে দেখলাম তার পিছনে একজন ক্যামেরা হাতে দাঁড়ায়া আছে। আমি পোজ দিয়ে দাঁড়ালাম।

- আন্দোলন আন্দোলনের জায়গায়, গণিমতের মাল, গণিমতের জায়গায়। এইগুলা আমার ট্যাক্সের টাকায় কেনা না?

- কিন্তু এভাবে জিনিসপত্র ভাঙচুর করাটা অনৈতিক মনে হচ্ছে না?

- আপনার কাছে বেচবো না। আপ্নে কালা দল।

আমি রাইস কুকার নিয়ে হাঁটা দিলাম। ক্যামেরা ম্যান আরেকজনরে ধরতে ছুটছেন। যার যার কাজ, তার তার ধর্ম।

গনির দোকানে গিয়া এইটা গণিরে গছায়া দিতে হবে। বসায় রাইস কুকার নিয়ে গেলে আব্বার হাতে প্যাদানি খাইতে পারি।

গণি অবশ্য মহাসুখে থাকার কথা, আম্লিগের পতন হইসে। সে অবশ্য সবসময়ই সরকার বিরোধী। যে সরকারই আসুক তার পুটু মেরে যায়। 

গণি দোকান খুলে বেজার ভাবে বসে আছে। কাস্টমার কম।

- কি খবর গনি ভাই। মন উদাস কেন?

- দেশের কি হইব চিন্তা করি বড় ভাই।
- চিন্তা ভাবনা ছাড়ো আর শরবত বানাও।
- শরবত?
- মানে চা দ্যাও।

গণি চা বানাতে গিয়ে আবার উদাস হয়ে গেলো।

- এই যে প্রাইমিনিষ্টার পলায়া গেলো, এখন ইন্ডিয়ান আর্মি নাকি আমাগো দেশ দখল করব? "র" নাকি চইলা আসছে?
- বাল গেছে, এখন কাকু আসবে। তুমি গণি গণিই থাকবা। টেনশন নিয়ো না। 

- না টেনশন কিসের? দোকান খুলতে পারিনা ঠিকমত, ব্যবসাপাতি ভাল না।
- তোমাকে একটা ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করে দিবো। নতুন সরকার মেলা বড়লোক্স।

- আমি ঋণ দিয়া কি করুম?
- কি আর করবা, চায়ের সাথে ভাতও বেচবা। আর এই যে নাও তোমার জন্য রাইস কুকার আনসি। একদম আমেরিকান মাল ইনটেক। আর, আমার আগের বাকির হিসাব ক্লোজ, রাইস কুকারের দাম ২৪০০ টাকা। তোমারে ডিসকাউন্টে দিলাম।

গণি খুশি হইল নাকি বেজার বুঝলাম না। আসলে গরিবের উপকার করতে নাই। এরা সারাজীবন গরীবই থাকে।

মাসুদরে কাল থেকে খুঁজে পাচ্ছি না। সে নাকি যুদ্ধে অংশগ্রহন করতে গেছে। দেখা হইলে কিছু উপদেশ খয়রাত দিতে হবে। নিজের কেল্লা অরক্ষিত রাইখা সে কি করতে গেছে জানতে হবে।