পোস্টগুলি

জুলাই, ২০২৪ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

সদানন্দ সমাচার

আমাদের একজন খুব কাছের বন্ধু আছে -"সদানন্দ" (ছদ্মনাম)। তারে এই নাম দেয়ার কারন ও মনে করে সে বাদে সারা দুনিয়ার সবাই খুব আনন্দে আছে।

যখনই দেখা হয় বলে, আছস ত সুখে, তাই বুঝস না।

- কি বুঝব?
- এই যে আমি কত কষ্টে আছি।
- মানুষ মাত্রই কষ্টে থাকে, এতে অবাক হবার কিছু নেই।

- আমার মত ঝামেলায় থাকলে বুঝতি!
- কি বুঝতাম?

সদানন্দ বেশি কথা বাড়ায় না। তার ফোন এসেছে। যেখানেই যায় সারাদিন ফোন আসে। ফোনটা কোনভাবে যদি তার কানে আইকা দিয়ে লাগানো যেতো তবে সে তাই করত। কোথাও আড্ডা দিতে গেলে মনে হয় সে প্রাইমিনিষ্টারের পিএস, এত ফোন আসে যে আড্ডা দেবার সময় পায় না।

সে এতই বিজি থাকে যে, কোথাও যাবার প্লান করলে, ফিরে আসার টিকিট আগে কনফার্ম করে। তারে নিয়ে কোথাও ঘুরতে বের হইলে সে নিজের চার-পাঁচটা কাজ শেষ করে তারপর বলবে, চল কই যাবি? তখন বলতে ইচ্ছা করে তোর হাউয়ায় যাবো... শালা।

তো সদানন্দ আমি আর ভোমা গেসি মাল খাইতে। উত্তরার বার, বেশ পশ ভাব আছে একটা। সদানন্দ উপরে যাবে না। কারন বউ জিগ্যেস করলে সে সব বলে দেয়। তাই সে এই সব হারাম জিনিসের সাথে নাই।

তারে নিচে রাইখাই আমরা উপরে গেলাম। সবাই টাল থাকলে গাড়ি কে চালাবে? 

ককটেলের অর্ডার দিয়া বসছি মাত্র পাঁচ মিনিট হয় নাই, শালায় ফোন দেয়া শুরু করসে।

- কি হইসে?
- তোদের খাওয়া শেষ?
- মাত্রতো আসলাম, অর্ডার দিসি।
- জলদি আয়?
- কেন, বউ ডাকে?
- না... আমার গার্লফ্রেন্ড ফোন দিতেসে। সে নাকি আমারে এই এলাকায় আসতে দেখসে।
- ধুর বাল...। আমি ফোন লাউড স্পিকারে দিলাম।
- এইখানে বেশিক্ষন থাকা যাবে না।

ভোমা একটা কুৎসিত গালি দিলো। ভোমার চাপ দাড়ি দেখে যে কেউ ভাবতে পারে সে খুব পরহেজগার, কিন্তু সে আসলে পুরাই একটা পিস।

- তুই ফোন রাখ শালা, নাইলে তোর বউরে গিয়া কইয়া দিমু তুই আমাগো লগে মাল খাইতে আইসস। ভোমা চিল্লায়।
- মানে কি?
- মানে চানকির নাতি, শান্তিতে মাল খাইতে দে। নিচে বইসা থাক। নাইলে তোর সুগ্যার বেবির সাথে ইটিস পিটিস কর ফোনে।

প্রায় ঘন্টা খানেক পরে আমরা নিচে নাইমা দেখি সদানন্দ গাড়িতে মুখ ভার করে বসে আছে। এমনিতেই মালের ডোজ, তারপর এই নাটক। ভোমা ক্ষেপে যায়।

- তোর সমস্যা কি?
- থাকস তো সুখে, তুই বুঝবি কি?
- তোরে বিয়া কি আমি দিসিলাম?
- বিয়া কই থেকে আসল। মিম রাগ করসে।

- মিমটা কে?
- আমার গার্লফ্রেন্ড।
- ও... তাই ক। এক মাল না খাইলেও তুই অন্য মাল খাস।
- ও খুব ভালো মেয়ে।
- ভালো দিতে জানে... আমি টিপ্পনি করলাম।

- এখন ক মিম রাগ করসে কেন?
- কেউ একজন এইখানে আমারে দেখে ফেলসে। তারে বাদে আমি একা মাল খাইতে আসছি সে এইটা মনে করসে।
- তোর মিম তো মাশাল্লা মেলা চালু মাল। বারে বারে তার পরিচিত লোক আছে দেখা যায়।

সদানন্দ হাসে। নির্মল হাসি। কেউ দেখলেও বুঝবে না এই শালা হারাম বলে মাল খায় না, কিন্তু লদকা লদকি করে।

আমি সিটে হেলান দিতে দিতে বললাম, এক কাজ কর তুই মিমরেও বিয়া করে ফেল। একলগে থ্রি-সাম করবি। এখন একটা রবীন্দ্র সঙ্গীত ছাড় আর লং ড্রাইভে মাওয়া চল। ইলিশ খামু।

সদানন্দ মুখ ভার করে গাড়ি চালু দেয়। বিড় বিড় করে বলে, আছিসতো সুখে...।

জীবন আনন্দময়! আমি সর্বদাই আনন্দে থাকি।


গণি সমাচার

ণির পুরো নাম আব্দুল মজিদ গণি। তারে মজিদ বইলাই বেশী ডাকি। কিন্তু মজিদ নামটাতে তার আপত্তি আছে। খালি এনআইডি কার্ডে মজিদ আছে বইলাই সে নাকি এইটারে বাদ দিতে পারতেসে না। নাইলে কবেই সে খালি আব্দুল গনি হয়ে যাইত।


একবার ভাবিসিলাম তারে বলি, চাইলেই এনআইডি কার্ড কারেকশন করে নেয়া যায়। পরে আর বলি নাই। মূর্খ লোকজন না থাকলে আমার মত জ্ঞানীর নিজেরে নিজে জ্ঞানী মনে হবে না।

গণিরে জিজ্ঞেস করেছিলাম 'মজিদ নামে তোমার সমস্যা কি?'
সে বলে, মজিদ নামে ডাকলে নাকি নিজেরে বাটপার মনে হয়।
- কেন বাটপার মনে হয়? 
- আর বইলেন না ওই বিদ্যানন্দ নামে নাকি এক বাটপারের সাথে সে শেয়ারের বিজনেস করছিল। পরে ধরা খাইসে।
- ওরে মূর্খ মজিদ.....। তুই মজিদই থাকবি। মনে মনে বললাম।
- ধরা খাইয়া বিদ্যানন্দ দেশের বাইরে চলে গেছে আর পুলিশের কাছে মজিদ ধরা খাইছে। এখন জেলে। দেশের সবাই জানে।
- হোলি ফাক আমিতো জানিনা...।
- কি পাক হইছে ভাই?
- কিছু না। 
- এই কারণে কেউ মজিদ বলে ডাকলে আমার খুব খারাপ লাগে।
- কথা সত্য। তবে দেইখো গনি থেকে না আবার গনোরিয়া হয়ে যাও। এই দেশে কোন কিছুর ঠিক নাই।
- সেইটা ঠিকই বলছেন ভাই। সরকার যদি ঠিক না থাকে দেশের মানুষ কি ঠিক থাকে?
 
 হ - শুরু হইসে সরকারের পুটু মারা। গনি ইজ ব্যাক অন ট্র্যাক। নাম নিয়া তারে বেশি গুতাইলাম না। 

- ঠিক আছে এখন গরম পানি দিয়া কাপ ধুইয়া, তোমার এক কাপ বিখ্যাত শরবত দাও।
- জ্বি বস দিতাছি। 
 
গণির মন ভালো থাকলে সে আমারে বস ডাকে। শুনতে খারাপ লাগে না। মনে হয় যে আমি বড় কোন কোম্পানির বস।