ঈদ ২০২৪
ঘুরতে বের হইসিলাম। চারিদিকে ঈদের আমেজ। কুরবানীর ঈদ আর চারদিন পরেই। রাস্তাঘাটে গরুর গোবরের প্রবল উপস্থিতি জানান দিচ্ছে, শহরে নতুন মেহমান এসেছে।
ঢাকায় রিকশার সংখ্যা বেড়ে গেছে হঠাত করেই। এরা কোন গানিতিক সূত্র মেনে বাড়ে না। দুইজন থেকে হঠাত ছয়জন হয়ে যায়। আবার বৃষ্টি দেখলে দশজন হয়ে যায়। ভাড়া অবশ্য ক্রিকেটের ডার্কওয়ার্থ লুইসের পদ্ধতি মেনে দাবি করে তারা।
যাবো ধানমন্ডি, দরদাম করে ১০০ টাকার ভাড়া ১৩০ টাকায় ঠিক হলো। মনে মনে ভাবলাম, থাক গরীব মানুষই তো। দুইটা মালবোরো খাইতেই তো আমার ৩০ টাকার বেশি চলে যায়।
রিকশা থেকে নামার পর শুরু হলো তার কাহিনী।
– আপনারে দেইখা, মনে হতেসে আপনে খুব ভাল মানুষ। একটা কথা বলি?
– বলেন।
– আমার মা গ্রামে অসুস্থ তার, দুইটা কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। স্যার যদি কিছু সাহায্য করতেন।
একথা শোনার পর ১০০ টাকার ভাড়া ১৩০ টাকায় ঠিক হবার জন্য নিজেকে মনে মনে দুইবার লাথি দিলাম। শালায়তো ঘাগু মাল! দুধ দোয়ানোর চেষ্টা করতেসে।
– আমি নিজেও অসুস্থ। সেইটার জন্য কি তোমার কাছে ডিস্কাউন্ট চাইছি?
– আপনে অসুস্থ?
– হ… আমার ব্লাড ক্যান্সার। কয়দিন বাঁচি ঠিক নাই।
হতভম্ব রিকশাওয়ালাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে হাঁটা দিলাম। শালা গরীব ভালো হইতে পারে, কিন্তু ছোটলোক মাদারটোষ্টই হবে। আজকে মন ভালো তাই এর সাথে ইতরামি করলাম না।
বন্ধু ধননঞ্জয় এর বাসায় আসছি। এইটা হিন্দু হইলেও আমার খুব পেয়ারের দোস্ত। দুই, হাত খুইলা খরচ করে। বিশেষ করে মাল খাবার সময় দুই পেগ পেটে পড়লেই সবার বিল সে দিয়া দেয়। মালে মালে মালতো ভাই হয়ে যাই তখন আমরা। তারে এইবার কুরবানীর দাওয়াত দিতে হবে। গরুর মাংস না খাউক, মুরগীর রোষ্টতো খাইতে পারবে। তাছাড়া এইরকম একটা উৎসবের সময় কাউরে ফালায়া রাখা ঠিক না। মানবতা বলে একটা কথা আছেনা। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।
ধননঞ্জয় এর নামে যে কে রাখসিলো? শালার নাম শুনলেই মনে হয় প্যান্টের চেইন খুলে দেখতে। তারে অবশ্য আমি আদর করে ধনু ডাকি। ধন ডাকতে পারতাম, কিন্তু তাতে তার গার্লফ্রেন্ড মাইন্ড করবে। ঐটা নাকি তার অধিকার। একসাথে আড্ডা দিতে গেলে যখন ধননঞ্জয় এর গার্লফ্রেন্ড তারে আদর করে “ধন” বলে ডাকে, তখন মাঝে মাঝে কনফিউজড হয়ে যাই, ডাকে কারে?
ধনুর বিল্ডিং এর দারোয়ান আমারে দেইখা লম্বা সালাম দিলো। এই এক সমস্যা ঈদ আসলেই সবাই লম্বা সালাম দেয়। তিনহাত বাড়ায় দেয় বকশিসের জন্য। আরে বেটা এই সালামের কোন মানে আছে? বকশিসের আশায় সালাম দিলে তোমার সোয়াব হবে? আমি দারোয়ানরে দেইখাও না দেখার ভান করলাম। বড়লোকেরা সাধারণত দারোয়ান জাতীয় প্রানীদের দিকে তাকায় না। এটাই অভিজাত স্টাইল। আমার বাড়ির দারোয়ান মাসুদ অবশ্য আমারে দেখলে দৌড় দেয়, নাইলে লুকাইয়া থাকে।
– স্যার, ঈদের বকশিস দিবেন না?
– না দিবো না। তোমারা সালাম দেয়া হয় নাই। স্লামালিকুম কি?
– সালাম দিসিলাম।
– সালাম দিতে হয়, আসসালামু-আলাইকুম পুরা বইলা। তুমিতো শুদ্ধ ভাবে বলতে পারো নাই। তুমি কি বিসিএস ফেল?
দারোয়ানের চেহারায় শঙ্কার ছাপ। বড়লোকদের সাথে তর্ক করতে হয়না। তাতে ভাতে মরার সম্ভাবনা থাকে।
– তুমি ধনুরেও সালাম দাও?
– জ্বী স্যার দেইতো।
– কেন দাও? ও তো হিন্দু… ওরে নমস্কার বলবা।
– জ্বী আচ্ছা।
– সালামের মানে জানো?
দারোয়ান মাথা নাড়ায়। তাতে হ্যাঁ এবং না দুইটাই বুঝা যায়। আমি কনফিউজড হয়ে গেলাম। এই ব্যাটায় কি মশকরা করে। কনফিউজড করি আমি মানুষকে আর সে কিনা আমার সাথে বিটলামি করে। এই ব্যাটাতো একটা ছোটলোক।
– শোনো… সালামের মানে হচ্ছে, সামনের জনের জন্য শান্তি কামনা। তুমি আমার শান্তি কামনা করতেস না, তুমি বকশিস কামনা করতেস। কাজেই বকশিস পাবা না। আরবিতে কিভাবে বকশিস কামনা করতে হয় সেটা শিখে তারপর বকশিস নিবা।
আমি অনেক জ্ঞান দেয়া হয়েছে এই ভঙ্গিতে গেইট পার হয়ে ভিতরে ঢুকলাম।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন