মুরুব্বি
আজকে গরম একটু কম পড়ছে। সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেলো।
একটা বিড়ি সেবন করার উদ্দেশ্যে মজিদের দোকানের দিকে রওনা দিবো। সিড়ি ভেঙে পাঁচতলা থেকে নিচে নামলাম। বিল্ডিং এর লিফট নষ্ট। বাড়িওয়ালা হিসেবে আমার উচিৎ লিফট ঠিক করে দেয়া, কিন্তু দিচ্ছি না। এই গরমে সিড়ি দিয়ে উপরনিচ করলে ভাড়াটিয়াদের ব্যায়াম হয়। একটু আল্লাহর নাম নেয় মুখে। ঘাম ঝরানোর সুফল আছে।
নিচে নেমে দেখি মাসুদ হারামজাদা গেইটে নাই। ঘটনা কি?
কালকেই বাটাম দিসিলাম দিনে ২ বার গোসল করার জন্য। ব্যাটা তুই থাকস একা। বউ গ্রামে। এইখানে তোর ২ বার গোসল করা কি ফরয? এমনিতেই পানি পায় না সাধারণ পাবলিক। তারওপর তুই পানি নষ্ট করিস!
তারে বলসিলাম, সিটি কর্পোরেশন রাস্তায় পানি ছিটায়, ঐখানে গিয়া গোসল করে আসতে।
মেজাজ খারাপ করে মজিদের দোকানে আসতেই দেখলাম, শালায় এইখানে বইসা চা-কলা খাচ্ছে।
কিরে তুই গেইট রাইখা এইখানে কি করস?
বস আজকে তো মে দিবস?
এইটা আবার কি?
মাসুদের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল।
বস, মে দিবস মানে সব শ্রমিকের ছুটি। এইদিনে শ্রমিকেরা যা খুশি করে। এই দিনে আমরা ভাষার জন্য প্রান দিয়েছিলাম।
তবে রে নাটকির পো- তুই কলা খাওয়া শেষে আমার সাথে দেখা করবি বাসায়। সাথে একটা কাঁচা কলা আর চিকন কঞ্চি নিয়া আসবি। আমি আজকে মহান মে দিবস পালন করব তোর সাথে।
মাসুদের মুখ শুকায় গেলো। চা রেখে দিলো দৌড়। আমি চেয়ে চেয়ে দেখলাম। ওর পিছে এই সাত সকালে দৌড় দেবার কোন ইচ্ছা নাই। গরু সন্ধ্যায় ঠিকই বাসায় ফিরবে।
আরাম করে একটা মালবোরো ধরালাম। এইসময় এলাকার মুরুব্বি আইসা উপস্থিত। আমি তারে না দেখার ভান করলাম। উপরদিকে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে কারেন্টের তারে বসা কাক দেখছি।
মুরুব্বি সেয়ানা, আমার সামনে এসে ব্রেক করে থেমে গেলো। গলা খাঁকারি দিলো একবার।
বাবাজি কেমন আছো?
আমিই বিরস বদনে হাতের সিগারেট ফেলে দিলাম। দুনিয়ায় শান্তি নাই।
আসসালামুয়ালাইকুম কাকা। ভাল আছি। আপনার দেহ কেমন আছে?
কাকায় একটু থমকে গেলো।
দেহ মানে?
দেহ মানে শরীর। সবাই শরীর বলেতো আমি দেহ বলি। ঐযে জেমস ভাই গান গাইছিলো না, “ঝাকানাকা ঝাকানাকা… দেহ দোলা না।”
ও… মুরুব্বি এখনও বুঝতে পারে নাই আমি বিরক্ত। সে লম্বা আলাপের জন্য তৈরি হচ্ছে।
তা বাবা বলতেই পারো, দেহ আর শরীরতো একই।
না এক না। আমি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি। যাদের এই বয়সে চিমশা মারা বডি থাকে তাদেরকে শরীর বলা যায়। আর যারা আপনার মত হাতির বডি নিয়া ঘোরে তাদেরকে “দেহ” বলতে হয়।
মুরুব্বি আমার কথায় কিঞ্চিত মাইন্ড খাইলেন। “বেয়াদব” বলে চলে গেলেন।
আজকাল জ্ঞানের কোন দাম নাই। এইজন্যই সমাজের এই অবস্থা।
যাই বাসার দিকে যাই। সকালটাই মেজাজ গরম দিয়ে শুরু হলো। শ্রমিক মাসুদের আজকের বেতন কেটে রাখতে হবে। সে অজ্ঞানী, মে দিবসের তাৎপর্য তার বোঝা দরকার।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন