পোস্টগুলি

মে, ২০২৪ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

টেসলার শহর

ঢাকায় অটোরিকশা কিছুটা বন্ধ হইসে। রাস্তায় জ্যাম কম। সকাল সকাল বাইর হইয়াই মেজাজটা ফুরফুরা হয়া গেলো।
পলাশী আইসা গনীর দোকানে চা খাইতে দাড়াইলাম। এক ভাইসাব দেখি সরকারের উপর মেলা খিস্তি দিচ্ছেন। আমিও তাল মিলাইলাম।

এইটা কোনো কাম করসে? গরীব বইলা কি ওরা মানুষ না? বিকল্প কিছুর ব্যবস্থা না করে অটো বন্ধ করে দিলে হবে?
গনী মাথা দুলিয়ে সায় দেয়। সে অবশ্য সরকারের কট্টর সমালোচক। আজকে অবশ্য কথা কম বলছে।
আমি আলোচনা উসকে দিলাম।

এই সরকার জালেম সরকার। গরীবের রক্ত চুইষা খায়।

ঠিক বলছেন ভাইজান। এই যে মেট্রো বানাইসে এইটারও দরকার ছিলো না। সব ঋনের টাকায় ফুটানি।

ঘটনা সত্য, আমি লুংগি পরে গেসিলাম আমারে মেট্রোতে ঢুকতে দেয় নাই। আমি টিপ্পনি কাটি।

তাইলেই দেখেন… সব বড়লোকের জন্য।
গনি দেখি মুচকি হাসে।

গনি তুমি হাসো কেন?

ভাইজান আপনে যে মশকরা করতাছেন হেয় বুঝতাসে না।
এবার ভদ্রলোক আমার দিকে নতুন দৃষ্টিতে তাকায়। তার চোখে সন্দেহ।

অটো রিকশা বন্ধ করে ভালো হইসে, কালকেই এক চুদিরপুতে আমারে ধাক্কা দিসে। আরেকটু হইলেই গেসিলাম। গনি বলে।
ভদ্রলোক চুপ করে আছেন। আমি তার পক্ষ নিলাম। নাইলে আলোচনা জমে না।
কিন্তু অটোরিকশা না থাকলে মানুষ অফিস যাবে কি করে?

হাইটা যাইবো, বাংগালী হাঁটে না… হাঁটলে শরীর ভালো থাকবে। গনি ব্যাপক জোসের সাথে বলে।
গনি হঠাত করে ভালো হয়ে গেলো…। আমি গনিরে চোখ টিপ দিলাম।

তারপরেও ভাইজান গরীবের পেটে লাথি দেয়া উচিৎ হয় নাই।

ভাই কি করেন আপনি? ভদ্রলোক চায়ে চুমুক দিতে দিতে জানতে চান।

আমি ভাই কিছুই করি না। লেখালেখি করি।

আপনের মনে হয় নিজের গাড়ি আছে।

আরে নাহ… আমি এত বড়লোক না। এইযে দেখেন আজকে অটো নাই তাই হাইটা রওনা দিসি।

আপ্নের অফিস কই?

লেখার জন্য অফিস লাগে না। কলম লাগে।

এই সকালে বাইর হইসেন তাই জিগাই।

কলম কিনতে বাইর হইসি। সাথে গনির ময়লা চা খামু।… আপনে কই যান?

আমার অফিস কারওয়ান বাজার।

হাইটাতো যাইতে পারবেন না। আপনেরে দেইখাই বুঝছি আপনে জমিদার বংশের লোক। গায়ে মেলা চিকনাই। একটা উবার ডাক দিয়া চইলা যান।
ভদ্রলোক সরু চোখে তাকালেন। হাতের চায়ের কাপ আমার দিকে ছুড়ে মারবেন কিনা মনে হয় চিন্তা করতেসেন। আমি বিভ্রান্তিকর হাসি দিলাম।

আমারে বাংলা মোটর নামায় দিলেই হবে। ওইখানে নাকি ভালো কলম আর সাদা কাগজ পাওয়া যায়। আজকে সরকারের মা-বাপ এক করে লিখতে হবে। দূর্নীতি করে দেশের বারোটা বাজায় দিতেসে।

আপনে বেশি কথা বলতেসেন। আমি উবার ডাকবো কেন?

তাইলে লন সিএনজি লইয়া দুই ভাই যাইগা।
ভদ্রলোক কথা না বাড়িয়ে চায়ের দাম দিয়ে দ্রুত হাঁটা দিলেন। চা শেষ হলো না তার।
সরকারের বিরুদ্ধে খিস্তি দেওয়া এক কথা আর পাগলের পাল্লায় পড়লে সাড়ে সব্বোনাশ।
আমি গনির থেকে একটা মালবোরো নিয়ে আরাম করে ধরালাম। বিড়ি বেইচা বড়লোক হওয়া আকিজ কোম্পানি মালবোরো বেইচা দিসে জাপানিগো কাছে। এরপর থেকেই সিগারেটে আর আগের মত স্বাদ পাই না।
সরকার এইগুলা দেইখাও দেখে না। নাহ একটা জ্বালাময়ী লেখা লিখতেই হবে।

গনি চা-বিড়ির দাম আমার খাতায় লেইখা রাখ। আমি হাওয়ামে উড়তা যায়ে গাইতে গাইতে গনিরে বিদায় জানালাম। আজকের দিনটা সুন্দর!


— কাপু

মুরুব্বি

আজকে গরম একটু কম পড়ছে। সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেলো।
একটা বিড়ি সেবন করার উদ্দেশ্যে মজিদের দোকানের দিকে রওনা দিবো। সিড়ি ভেঙে পাঁচতলা থেকে নিচে নামলাম। বিল্ডিং এর লিফট নষ্ট। বাড়িওয়ালা হিসেবে আমার উচিৎ লিফট ঠিক করে দেয়া, কিন্তু দিচ্ছি না। এই গরমে সিড়ি দিয়ে উপরনিচ করলে ভাড়াটিয়াদের ব্যায়াম হয়। একটু আল্লাহর নাম নেয় মুখে। ঘাম ঝরানোর সুফল আছে।
নিচে নেমে দেখি মাসুদ হারামজাদা গেইটে নাই। ঘটনা কি?
কালকেই বাটাম দিসিলাম দিনে ২ বার গোসল করার জন্য। ব্যাটা তুই থাকস একা। বউ গ্রামে। এইখানে তোর ২ বার গোসল করা কি ফরয? এমনিতেই পানি পায় না সাধারণ পাবলিক। তারওপর তুই পানি নষ্ট করিস!
তারে বলসিলাম, সিটি কর্পোরেশন রাস্তায় পানি ছিটায়, ঐখানে গিয়া গোসল করে আসতে।
মেজাজ খারাপ করে মজিদের দোকানে আসতেই দেখলাম, শালায় এইখানে বইসা চা-কলা খাচ্ছে।

কিরে তুই গেইট রাইখা এইখানে কি করস?

বস আজকে তো মে দিবস?

এইটা আবার কি?
মাসুদের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল।

বস, মে দিবস মানে সব শ্রমিকের ছুটি। এইদিনে শ্রমিকেরা যা খুশি করে। এই দিনে আমরা ভাষার জন্য প্রান দিয়েছিলাম।

তবে রে নাটকির পো- তুই কলা খাওয়া শেষে আমার সাথে দেখা করবি বাসায়। সাথে একটা কাঁচা কলা আর চিকন কঞ্চি নিয়া আসবি। আমি আজকে মহান মে দিবস পালন করব তোর সাথে।
মাসুদের মুখ শুকায় গেলো। চা রেখে দিলো দৌড়। আমি চেয়ে চেয়ে দেখলাম। ওর পিছে এই সাত সকালে দৌড় দেবার কোন ইচ্ছা নাই। গরু সন্ধ্যায় ঠিকই বাসায় ফিরবে।
আরাম করে একটা মালবোরো ধরালাম। এইসময় এলাকার মুরুব্বি আইসা উপস্থিত। আমি তারে না দেখার ভান করলাম। উপরদিকে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে কারেন্টের তারে বসা কাক দেখছি।
মুরুব্বি সেয়ানা, আমার সামনে এসে ব্রেক করে থেমে গেলো। গলা খাঁকারি দিলো একবার।

বাবাজি কেমন আছো?
আমিই বিরস বদনে হাতের সিগারেট ফেলে দিলাম। দুনিয়ায় শান্তি নাই।

আসসালামুয়ালাইকুম কাকা। ভাল আছি। আপনার দেহ কেমন আছে?
কাকায় একটু থমকে গেলো।

দেহ মানে?

দেহ মানে শরীর। সবাই শরীর বলেতো আমি দেহ বলি। ঐযে জেমস ভাই গান গাইছিলো না, “ঝাকানাকা ঝাকানাকা… দেহ দোলা না।”

ও… মুরুব্বি এখনও বুঝতে পারে নাই আমি বিরক্ত। সে লম্বা আলাপের জন্য তৈরি হচ্ছে।

তা বাবা বলতেই পারো, দেহ আর শরীরতো একই।

না এক না। আমি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি। যাদের এই বয়সে চিমশা মারা বডি থাকে তাদেরকে শরীর বলা যায়। আর যারা আপনার মত হাতির বডি নিয়া ঘোরে তাদেরকে “দেহ” বলতে হয়।
মুরুব্বি আমার কথায় কিঞ্চিত মাইন্ড খাইলেন। “বেয়াদব” বলে চলে গেলেন।
আজকাল জ্ঞানের কোন দাম নাই। এইজন্যই সমাজের এই অবস্থা।
যাই বাসার দিকে যাই। সকালটাই মেজাজ গরম দিয়ে শুরু হলো। শ্রমিক মাসুদের আজকের বেতন কেটে রাখতে হবে। সে অজ্ঞানী, মে দিবসের তাৎপর্য তার বোঝা দরকার।