ইদ সমাচার ২০২৫
শামরে দেখাইয়া দেখাইয়া দিলীপরে ২০০ টাকা দিলাম। ঈদ সেলামির জন্য সে আমার সাথে বেশ মধুর ব্যবহার করতেসে। একবার সালামও দিসে। জিগাইলাম, তুমি না মালাউন, সালাম দাও কেন?
শাম নির্বোধের মত হাসি দিলো। তার ফাঁকা দাঁতের মাঝখান দিয়া বাতাস বের হয়ে যায় দেখে বেশিরভাগ কথাই আমি বুঝতে পারি না। কিন্তু তারে এইবার আমি বখশিস দেবো না ঠিক করেছি। গত মাসে শাম আমার কাছ থেকে ২০০ টাকা ধার নিসে, আজও ফেরত দেয় নাই।
যখনই বখশিস চায় আমি বলি আগে ধারের টাকা ফেরত দাও তারপর বখশিস পাবা। শামের কালা মুখ দেখতে বড়ই আনন্দ লাগতেসে। সে মনে করসে আমি একটা গাভি আমারে যখন খুশি দোহন করা যাবে। যারা ধারের টাকা ফেরত দেয় না তারা চুদির ভাই। শাম একটা চুদির ভাই।
রাস্তায় বের হয়ে মনে হল ঢাকা একটা জাহান্নাম। ইদ হচ্ছে আত্মীয় স্বজনের বাসায় গিয়ে মোলাকাতের দিন, বাচ্চালোকদের সালামি সংগ্রহের দিন। কিন্তু তার বদলে বেবাক মানুষ রাস্তাঘাটে বের হয়ে কি সব অদ্ভুত মিছিল করতেসে।
ঈদের নামাজ শেষে এরা আনন্দ মিছিল বাইর করসে। মিছিলে আবার ভ্যানের উপর কয়েক পিস মূর্তিও দেখা যাচ্ছে। একটা মূর্তিতে আবার গাধার পিঠে উল্টা বসা একজন মানুষ। এইটা কি হোজ্জার কাল্পনিক গল্পের অনুকরণে বনাইসে নাকি কে জানে! বড়ই উর্বর মস্তিস্কের লোকজন দেখা যাইতেসে ঢাকার রাস্তায়। এরা নাইচা গাইয়া বলতেসে স্বাধীন স্বাধীন...। কে স্বাধীন, কিসের স্বাধীন কিছু বুঝা যাচ্ছে না। এইটা নাকি সুলতানি আমলের ইদ আনন্দ উৎসব। এখন ইউনুস সুলতান হইলে অবশ্য কথা ঠিক আছে। এই গাধার পিঠে বসা মানুষটারে অবশ্য ইউনুসের মত লাগতেসে না। জামায়াতের জিন্দা অলির মত লাগতেসে অনেকটা। হোজ্জারে দেখি নাই কোনদিন, তার সাথে মিল আছে কিনা জানি না।
মাঝখান থেকে আমার স্যান্ডেল গায়েব হয়ে গেলো নামাজে এসে। কি বিচিত্র স্বাধীন দেশে আছি।

কবরস্থানে যাইতে হবে। এইটা একটা দেখার মত জায়গা। ইদের সময় সবাই তাদের অতি প্রিয়জনদের একবার হলেও শুভেচ্ছা জানাতে যায়। অপরপাশে শুভেচ্ছা না পৌছালেও মাটির খুব কাছাকাছি গিয়ে জানান দেয়, হে প্রিয়জন আমি এসেছি। আমার আনন্দের দিনেও তোমাকে ভুলি নাই, তুমি ভাল থাকো। এই মানুষগুলার চেহারা দেখতে আমার খুব ভাল লাগে।
মাসুদরে সকাল থেকে দেখতেসি না। তারও খোঁজ খবর নেয়া দরকার। রমজান মাস শেষে তারও স্বাধীনতা পাবার অধিকার আছে। হাজার হোক আমরা সবাই মানুষ! তারে সালামি দিতে হবে।
এরপর বাসায় গিয়া একটা ঘুম দিতে হবে। সন্ধ্যায় ঘুম থেকে উঠে আবার শুরা পানের দাওয়াতে যেতে হবে। এজন্যই কবি ওমর খৈয়াম বলেছেন,
এইখানে এই তরুর তলে
তোমার আমার কৌতুহলে,
যে ক’টি দিন কাটিয়ে যাবো প্রিয়ে-
সঙ্গে রবে সুরার পাত্র
অল্প কিছু আহার মাত্র
আরেকখানি ছন্দ মধুর কাব্য হাতে নিয়ে।