পোস্টগুলি

ইদ সমাচার ২০২৫

শামরে দেখাইয়া দেখাইয়া দিলীপরে ২০০ টাকা দিলাম। ঈদ সেলামির জন্য সে আমার সাথে বেশ মধুর ব্যবহার করতেসে। একবার সালামও দিসে। জিগাইলাম, তুমি না মালাউন, সালাম দাও কেন?

শাম নির্বোধের মত হাসি দিলো। তার ফাঁকা দাঁতের মাঝখান দিয়া বাতাস বের হয়ে যায় দেখে বেশিরভাগ কথাই আমি বুঝতে পারি না। কিন্তু তারে এইবার আমি বখশিস দেবো না ঠিক করেছি। গত মাসে শাম আমার কাছ থেকে ২০০ টাকা ধার নিসে, আজও ফেরত দেয় নাই।

যখনই বখশিস চায় আমি বলি আগে ধারের টাকা ফেরত দাও তারপর বখশিস পাবা। শামের কালা মুখ দেখতে বড়ই আনন্দ লাগতেসে। সে মনে করসে আমি একটা গাভি আমারে যখন খুশি দোহন করা যাবে। যারা ধারের টাকা ফেরত দেয় না তারা চুদির ভাই। শাম একটা চুদির ভাই।

রাস্তায় বের হয়ে মনে হল ঢাকা একটা জাহান্নাম। ইদ হচ্ছে আত্মীয় স্বজনের বাসায় গিয়ে মোলাকাতের দিন, বাচ্চালোকদের সালামি সংগ্রহের দিন। কিন্তু তার বদলে বেবাক মানুষ রাস্তাঘাটে বের হয়ে কি সব অদ্ভুত মিছিল করতেসে। 

ঈদের নামাজ শেষে এরা আনন্দ মিছিল বাইর করসে। মিছিলে আবার ভ্যানের উপর কয়েক পিস মূর্তিও দেখা যাচ্ছে। একটা মূর্তিতে আবার গাধার পিঠে উল্টা বসা একজন মানুষ। এইটা কি হোজ্জার কাল্পনিক গল্পের অনুকরণে বনাইসে নাকি কে জানে! বড়ই উর্বর মস্তিস্কের লোকজন দেখা যাইতেসে ঢাকার রাস্তায়। এরা নাইচা গাইয়া বলতেসে স্বাধীন স্বাধীন...। কে স্বাধীন, কিসের স্বাধীন কিছু বুঝা যাচ্ছে না। এইটা নাকি সুলতানি আমলের ইদ আনন্দ উৎসব। এখন ইউনুস সুলতান হইলে অবশ্য কথা ঠিক আছে। এই গাধার পিঠে বসা মানুষটারে অবশ্য ইউনুসের মত লাগতেসে না। জামায়াতের জিন্দা অলির মত লাগতেসে অনেকটা। হোজ্জারে দেখি নাই কোনদিন, তার সাথে মিল আছে কিনা জানি না।

মাঝখান থেকে আমার স্যান্ডেল গায়েব হয়ে গেলো নামাজে এসে। কি বিচিত্র স্বাধীন দেশে আছি।


কবরস্থানে যাইতে হবে। এইটা একটা দেখার মত জায়গা। ইদের সময় সবাই তাদের অতি প্রিয়জনদের একবার হলেও শুভেচ্ছা জানাতে যায়। অপরপাশে শুভেচ্ছা না পৌছালেও মাটির খুব কাছাকাছি গিয়ে জানান দেয়, হে প্রিয়জন আমি এসেছি। আমার আনন্দের দিনেও তোমাকে ভুলি নাই, তুমি ভাল থাকো। এই মানুষগুলার চেহারা দেখতে আমার খুব ভাল লাগে।

মাসুদরে সকাল থেকে দেখতেসি না। তারও খোঁজ খবর নেয়া দরকার। রমজান মাস শেষে তারও স্বাধীনতা পাবার অধিকার আছে। হাজার হোক আমরা সবাই মানুষ! তারে সালামি দিতে হবে। 

এরপর বাসায় গিয়া একটা ঘুম দিতে হবে। সন্ধ্যায় ঘুম থেকে উঠে আবার শুরা পানের দাওয়াতে যেতে হবে। এজন্যই কবি ওমর খৈয়াম বলেছেন, 

এইখানে এই তরুর তলে
তোমার আমার কৌতুহলে,
যে ক’টি দিন কাটিয়ে যাবো প্রিয়ে-
সঙ্গে রবে সুরার পাত্র
অল্প কিছু আহার মাত্র
আরেকখানি ছন্দ মধুর কাব্য হাতে নিয়ে।
 
এই কবির নামের সাথে কেন যে 'খৈ' আর 'আম' দুইটা জিনিস লাগাইসে বুঝি না। তার পিতা-মাতা নিশ্চয়ই সুলতানি আমলে বাংলায় এসেছিলেন। সেইখান থেকেই এই নামকরন।

মাসুদের ইফতার

মাসুদরে নিয়া ইফতারি কিনতে বের হইসি। সারাদিন ডিউটি দেয়, ভাবলাম কিছু ভাল-মন্দ কিনে খেতে দেই। রমজান হচ্ছে দান-খয়রাত করে সোয়াব কামানোর মাস। এই এক মাস যা দান করব তার সত্তুর গুন বেশি সোয়াব হবে। বড়লোক হবার এই এক মজা। টাকা দিয়া সোয়াব কিনা যায়।

মসজিদের সামনেই ইফতারির দোকান বসছে। প্রচুর ভিড়। ভিড়ের মাঝখানেই এক অটো রিকশা মাসুদের পায়ের উপর চাকা তুলে দিল। আমি কিছু বোঝার আগেই মাসুদ অটোচালকের ঘাড়ের উপর দুইটা বন চটকনা বসায় দিল। বলতেসে তোর ভাগ্য ভালো এখন রোজা চলে তাই গালে মারলাম না।

অটোরিকশা চালকেদের ইগো অনেক বেশি। সে তো আর সাধারণ রিকশা চালক না। তার রিকশাকে বাংলার টেসলা বলা হয়। সে "মাদারচোত' বলে মাসুদের উপর ঝাপায়া পড়সে। বেশ লেগে গেল ভীড়ের মাঝে ধুন্দুমার কান্ড।

আমি পকেট থেকে মোবাইল বের করে এই দৃশ্য ধারন করা শুরু করলাম। দুইজনের একজন মরে গেলে প্রমান রাখা লাগবে। আশেপাশের কয়েকজন যতই থামানোর চেষ্টা করে এই দুইজনের মারামারি ততই বাড়ে। তবে মাসুদের শক্তি বেশি হওয়াতে সে জিতে যাবে মনে হচ্ছে। আমি শিষ দিয়ে তাকে উৎসাহ জানাবো কিনা চিন্তা করছি।

অবশেষে অটোচালক রণে ভংগ দিল সুবিধা করতে পারবে না বুঝে। গজগজ করতে করতে বলতেসে, রোজা রমজানের দিন তোরে কিছু কইলাম না। তোরে খালি একবার একলা পাইয়া লই।

- তুই আমার বালটা ছিড়িস...। মাসুদ একটা অশ্লিল ভঙ্গি করে চোখ টিপে দিল অটোচালককে।

মাসুদ কুকুরের মত হাঁপাতে হাঁপাতে আসল। চোখে যুদ্ধ জেতার ঝিলিক। শার্টের দুইটা বোতাম গায়েব, গলায় খামচি।

- তোর তো রোজা ভেঙে গেসেরে মাসুদ।
- কি যে কন বস! আমি কি ইচ্ছা কইরা মারামারি করসি? শা... পায়ের উপর তুইলা দিয়া কয় চাপস না কেন। সরি না বইলা উলটা বেয়াদবি করে। আমার একটা সম্মান আছে না?

- হ।। তুই যুদ্ধে জিতছস। কি এনাম চাস?

- জিলাপি আর হালিম কিনা দেন, লগে নান রুটি। আজকে ভাল পরিশ্রম হয়ে গেলো।

আমি মাসুদরে দুই-নম্বর শাহী হালিম আর কালা তেলে ভাজা জিলাপি কিনে দিলাম। নান-রুটি পাই নাই, টাকা দিয়ে কইসি সন্ধ্যায় গিয়া নিয়া আসিস।

মাসুদ বেজায় খুশি। আমি জানি এই টাকা দিয়া সে নানরুটি না কিনে সিগারেট খাবে। তারে পুলিশের কাছে ধরাইয়া দিতে পারলে ভালো হইত। দেশে নাকি ধূমপানের বিরুদ্ধে নতুন আইন হইতেসে। মাসুদরে ট্রান্সজেন্ডার বানাইয়া পাবলিক প্লেসে ধূম্রপানের আওয়তায় কেলানি দেয়া গেলে ভালো লাগত।

কিন্তু আফসোস এই থানার দারোগা নিজেই বিড়িখোর। বিড়ি খাইতে গেলে তার সাথে মাঝে মধ্যেই গনির দোকানে দেখা হয়ে যায়। দেশটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, রক্ষক যখন বিড়িখোর হয় তখন ভালো মানুষেরা কি করবে?

নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস, ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস

ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার ভাঙ্গা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে বুলডোজার আনা হয়েছে, এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। এর সাক্ষী না হলে কি হয়! বুড়া বয়সে পোলাপানরে অন্তত বলতে পারব আমি ৭১ দেখি নাই, কিন্তু ৫ই ফেব্রুয়ারী দেখেছি। এইটাও মুক্তিযুদ্ধের সমান।

রাতেই আসার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু একটা বিয়ার দাওয়াতে গেসিলাম। লুটপাটের থেকে দাওয়াত খাওয়া বেশি ইম্পর্টেন্ট মনে হইসিলো আমার কাছে। অবশ্য টিভিতে লাইভ দেখতেসিলাম তৌহিদি ছাত্র-জনতার উল্লাস। সকাল সকাল তাই নিচে নেমে মাসুদরে খুঁজতেছি। সাথে একজন সঙ্গী থাকা দরকার।

মাসুদ যথারীতি গেইটে নাই। ফোন দিলাম, "তুই কইরে মাসুদ?"

- বস আমি তো একটু ধানমন্ডি আইসি। এইখানে স্বৈরাচারের কারখানা উড়াইয়া দেয়া হইতেসে!
- তুই বইলা গেলি কারে?

- আপনে তো ঘুমাইতেসিলেন, তাই বিরক্ত করি নাই।
- তুই ওইখানেই থাক, তোরে যদি আজকে হাতের কাছে পাই। নিজের কেল্লা পাহারা দেয়া রাইখা তুই গেছস বিপ্লবী সাজতে?

আমি ফোন কেটে দিয়ে একটা অটোরিকশা ঠিক করলাম। ৩২ নম্বর যাবো শুনে সে দুইশ টাকা দাবি করল। আমি দামদামি না করেই উঠে গেলাম। দেশের এই ক্রান্তি লগ্নে টাকা পয়সা কোন বিষয় না। অটোরিকশা চালক দেখতে গুন্ডার মত। আজকাল অবশ্য বেশিরভাগ অটোরিকশা চালকই দেখতে গুন্ডার মত। গুন্ডার মত দেখতে একজন সাথে থাকলে নিরাপদ লাগে।

৩২ নম্বর লোকে লোকারণ্য। আমার অটো চালক বলল "ভাইজান কি আবার যাবেন?"

- হুম, তুমি ওয়েট করবা?
- কোন সমস্যা নাই, আমি আছি। 

- তাইলে এইখানেই থাকো। আমি মাসুদরে ফোন দিলাম আবার। সে পাঁচ মিনিট পরে আসলো আমার কাছে। তার হাতে কিছু ইট আছে আর একটা বস্তা।

- এইগুলা কি আনছিস?
- কিছু পাইতেসি না বস নেয়ার মত। কয়টা ইটা নিয়া আসছি। বস্তায় কিছু কাগজ আর ফাইল আছে। একজনের কাছ থেকে কাইড়া নিসি।

- চুরি করতেছিস?
- কি যেন কন বস? এইগুলা গণিমতের মাল। সবাই নিতেসে, আমিও নিয়া আসছি।

আমি কিছু বললাম না। মব সাইকোলজি নিয়ে এখন জ্ঞান দেয়ার সময় না। জ্ঞান পরে দোচানো যাবে। আমি নাটক দেখতেসি। মানুষের উল্লাস দেখতেসি। বড় একটা মেশিন একটা বিখ্যাত বাড়িতে গুতা দিতেসে এইটা একটা ফ্যাসিনেটিং বিষয়। ছোট ছোট ডান্ডা হাতে মোবাইল ভ্লগাররা ঘুরতেসে। কিছু হুজুর টাইপের লোকজন হাতুড়ি নিয়া দেয়ালে বাড়ি দিতেসে সোয়াবের আশায়, ইন্টারভিউ দিতেসে ক্যামেরার সামনে। দিস প্লেস ইজ এবসুলেট সিনেমা। ইতিহাস ভাইঙ্গা নতুন ইতিহাস গড়ার চেষ্টা দেখতে খারাপ লাগতেসে না।

ঘন্টা দুয়েক পর আমি, মাসুদ আর আমাদের গুন্ডা অটোওয়ালা কিছু রড, ইটা আর এক বস্তা কাগজ নিয়া রওনা দিলাম বাসার দিকে। আজকের দিনটা বৃথা যায় নাই।

 

কিছু জিনিস গুপন থাকাই ভালো

মফিজ একজন ডাক্তার। সে প্রায় চল্লিশ বছর ধরে পোস্টমর্টেম করে। রিটায়ারমেন্টের সময় চলে আসছে। একজন এসিসট্যান্ট আছে মফিজের, তার নাম হাসমত। বয়স কম আর বেজায় খাচ্চড় প্রকৃতির। আজকে সকালে একটা ডেড বডি আসছে। সেটার পোস্টমর্টেম হাসমতকে শুরু করতে বলে মফিজ গেছে বাইরে চা খাইতে।


একটু পরেই হাসমত দৌড়াইয়া আসছে। হাঁপাইতে হাঁপাইতে বলে, বস জলদি আসেন। একটা জিনিইস দেখানো লাগবো আপনারে। কিছু গন্ডগোল হইসে ভাইবা মফিজ দৌড়াইয়া মর্গে যায়। গিয়া দেখে লাশ তখনো চাদরে ঢাকা।

হাসমত চাদর উঠাইয়া তারে দেখায়। দেখসেন বস - এর মেশিন কত বড়? 

আসলেই... ডেডবডির পেনিসের সাইজ দেইখা মফিজের চোখ কপালে উঠে যায়। এইটারে কোনভাবেই ন্যাচারাল মনে হয় না তার কাছে। সে মফিজরে বলে, চাকু আর ফরমালিন নিয়া আসতে। নিজের হাতে লাশের বডি থেইকা পেনিস কাইটা ফরমালিনের জারে রাখে। এই জিনিস বাসায় নিয়া বউরে না দেখালেই নয়। তার চল্লিশ বছরের অভিজ্ঞতায় এত বড় জিনিস সে দেখে নাই। বউরে দেখায়া একটা সারপ্রাইজ দেয়া যাবে। তাই অনৈতিক হইলেও সে এই চুরিটা করে।

- এই লোকের নাম কিরে হাসমত?
- এর নাম ছিলো আবুল খন্দকার। কিন্তু আপনে এইডা কাটেন ক্যান?
- বিজ্ঞান গবেষনার জইন্য অনেক কিছু করতে হয়রে হাসমত। তুই নাদান মানুষ, তোর আরো শিখার বাকি আছে।

আবুল তুমি একটা মাল... বিড়বিড় করে বলে মফিজ।

সন্ধ্যায় বাসায় গিয়া বউরে সারপ্রাইজ দিবে ভাইবা মফিজ তার ব্যাগ থেকে ফরমালিনের জারটা বাইর করে।

- দ্যাখো...বউ আজকে কি পাইসি। এইরকম জিনিস আগে কোনদিন দ্যাখসো?

মফিজের বউ একবার তাঁকাইয়াই কান্না কান্না স্বরে কয়, সেকি...! আবুল মইরা গ্যাছে? 

------

কৌতুক শেষ এখন একটা প্রবাদ বাক্য বলি। কুত্তার লেজ কোনদিন সোজা হয় না। আমরা সারপ্রাইজড হই নাই, আমরা কেউ মফিজ না, মফিজের বউ ও না।


 

ডিসেম্বরের শীত

সদানন্দ বরাবরই বিশাল বিশাল প্লানিং করে। যার কোনটাই শেষ পর্যন্ত সফল হয় না। গতকাল সারাদিনে সে আমারে তিনবার কল দিসে আড্ডা দিতে যাবার জন্য। প্রতিবারই আমি শুধু হাসছি।

কারন তার প্লানিং এ সে কখনো অন্যদের সমস্যারে গোনায় ধরে না। আমি যখন দুপুরের খাবার রেডি করতেসি, সে তখন গাড়ি নিয়া বের হইসে তেল নিতে।

যার ইকোনমিক কন্ডিশন যত ছড়ানো সে তত বেশি ঝামেলায় থাকে। আমার ঝামেলা খাবার রান্না করা নিয়ে, তার ঝামেলা গাড়ির তেলের লাইন লম্বা হওয়া নিয়ে।

মানুষ বড়ই বিচিত্র। আমাকে কালকের চিন্তা করতে হয়না, আবার কাউকে আজকে বাজার কিভাবে হবে সেই চিন্তা করতে হয়। পৃথিবীটা খুব নিষ্ঠুর একটা জায়গা।

এই দুঃখ ভুলতে সন্ধ্যায় রাসেলের ফোন পেয়ে চলে গেলাম। রাসেল কালেভদ্রে ফোন দেয়। তার নাম শুনলেই আমার ই-ভ্যালির কথা মনে পড়ে। রাসেলের আড্ডায় গিয়ে কিছু মুমিন বান্দা পেয়ে গেলাম। এরা সবাই নামাজ পড়ে ঠিকমত, কিন্তু মদ খাওয়া হারাম এইটা বিশ্বাস করে না।

আসলে জগতের সকল আনন্দ পাপে। পূন্যের ফল চোখে দেখা যায় না। আর আনন্দ বাদে মানুষ বাঁচে না। মইরা গিয়া ধর্ম পালনের কোন মানে দেখি না।

পল্টনের আশেপাশে যে এত এত বিদেশী মদ পাওয়া যায় সেটা আমি জানতাম না। গতকালকের সভায় এই বিশেষ জ্ঞান লাভ করে আমি খুব প্রীত হলাম। দেশ তাইলে পুরা ডুবে যায় নাই। কয়দিন খালি ডুব দিয়া ছিলো। বিপ্লব হোক আর যাই হোক, বাঙ্গালি আসলে একটা ফুর্তিবাজ জাতি।

রাত এগারোটায় জলসা ভেঙে কিছু লালপানি গলায় দিয়ে রাস্তায় নামলাম। রাতের ঢাকা খুব সুন্দর। কিছু শীত ইতিমধ্যে নেমে গেছে। শাহবাগের রাস্তায় এক তরুনী দেখলাম খুব সাজগোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। থাকুক... কিছু মানুষের উষ্ণতা দরকার। টাকার বিনিময়ে সেটা কিনতে পারলে সমস্যা কই? 

রাস্তঘাট ফাঁকা, অঘোষিত ক্যান্টনমেন্ট ঢাবি, দশটার পর তার দরজা খুলে দেয়। টিএসসিতে ধুন্দুমার মানুষের ভীড়।

এই শহরে আসলে আড্ডা দেয়ার জায়গা নেই, মানুষের আনন্দ করার কোন জায়গা নেই। ঢাকা একটা নিরানন্দ শহর। কেউ একজন আনন্দ করতে গেলেই, আরেকজন বলে - চুপ!

মিনা বাজার

আজিমপুর মিনা বাজার আউটলেটে গেলাম সেদিন। উবার আসতে দেরি করতেসে তাই হুদাই এটা ওটা নাড়তেসি। ঢাকা ভার্সিটির দিকে নাকি পোলাপান সব গেইট আটকাইয়া নিজেদের ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে ঘোষনা করেছে। তাই এলাকা জুড়ে বিশাল জ্যাম। উবার চালক খালি বলে আসতেসি, কিন্তু আসার নামগন্ধ নাই।

শেলফে দেখলাম মোয়া, নাড়ু এইগুলা রাখা আছে। কিন্তু প্রচুর চাইনিজ তেলাপোকা ঘুরঘুর করতেসে সেগুলার উপর। একটা চিড়ার প্যাকেটের ভিতরেও দেখলাম কয়েকটা আছে।

একজনরে ডাক দিয়ে দেখাইলাম, বেডি কিছু না বলে চিড়ার প্যাকেট নিয়ে চলে গেল। আমি আর মোয়া কিনলাম না। কয়েকটা ড্রিঙ্কস নিয়ে কাউন্টারে চলে গেলাম। টিন ফুটা কইরা অন্তত চাইনিজ তেলাচুরা ঢুকতে পারবে না।

- ভাই আপনাদের খাবারের শেলফে প্রচুর তেলাপোকা। এইগুলা তো ফালাই দেয়া দরকার।

কাউন্টারের ছেলেটা ব্যাপক ব্যস্ত। শুধু বলল- "তেলাপোকার ঔষধ দিতে হবে।"

- তেলাপোকার ঔষধ পাশের শেলফেই আছে। আমি দিয়ে দেই?

পোলায় কোন কথা বলে না। একটা হিমু হিমু ভাব আছে এর মধ্যে। জগতে দুই-চাইরটা তেলাপোকা থাকলেই কি আর না থাকলেই কি?

- তেলাপোকা তো কামড় দেয় না।

এই মহাজ্ঞান লাভ করে আমি মিনা বাজার থেকে বের হয়ে আসলাম। অর্বাচীনের সাথে তর্ক করে কি লাভ? এই দেশের মানুষ যেরকম সুপারশপও সেরকম হবে। এইখানে তেলাপোকা আর ইঁদুর থাকাটা খুব স্বাভাবিক!

একজন ম্যাজিট্রেটকে ফেইসবুকে মাঝেমধ্যেই দেখি ব্যপক ভাবের সহিত সব জায়গায় গিয়ে তদারকি করেন। কিন্তু খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে দেশে কোন ট্রেইনিং দেয়া হয় কিনা জানি না। দোকান খোলার আগে সার্টিফিকেশন লাগে কিনা জানি না।

এরা যদি মদ বেচত তাইলে অবশ্য আমি মাইন্ড করতাম না। মদে কোন ভেজাল নাই। পুরান মদ টেস্টি হয়।

মিনা কার্টুন দেখতাম ছোটবেলায়। সে দৈত্যের কাছে স্বপ্নে ল্যাট্রিন চায়, কেন চায় আজও আমি বুঝি নাই। আমরা ল্যাট্রিন বিপ্লবে সফল হয়েছি। ইন্ডিয়ানরা নাকি এখনও খোলা আকাশের নিচে হাগে। প্রাকৃতিক কাজ প্রকৃতির সান্নিধ্যেই উত্তম।

আমরা উত্তম জাতি। আমরা বিপ্লবী।

উবার আসছে। সে খিস্তি করতেসে। রাস্তায় জ্যাম নাকি ইচ্ছা কইরা লাগাইসে। আমি জিগাইলাম- "লাল স্বাধীনতা কেমন লাগছে।"

- ভাই, মজা কইরেন না। পছন্দ না হইলে নামায় দিবো কিন্তু।

- উত্তম...। আমি চুপ করে গেলাম। তার অবশ্যই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আছে আমাকে নামিয়ে দেয়ার। গন্তব্যে গিয়ে তাকে একটা পাঁচ তারা দিয়ে দেবো।

 


 



বাতির নিচে অন্ধকার থাকে, পানির নিচে কুমির

মন মেজাজ অত্যধিক খারাপ থাকায় কয়দিন বাসা থেকে বের হই নাই। ভোমা আর সদানন্দের পারিবারিক ঝামেলাতেও নাক গলাই নাই। মেয়েলোক ঘটিত ঝামেলায় নাক না গলানোর শিক্ষা আমি ইতিহাস থেকে আমি নিয়েছি। এই কারনে ট্রয় নগরী পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। যদিও অনেক ইতিহাসবেত্তা বলবেন পুরো ব্যপারটাই পরকীয়ার কারনে ঘটেছে। কিন্তু চিন্তা করে দেখেন, মেয়ে মানুষ না থাকলে পরকীয়া কিভাবে হবে?

যাক সে কথা, সেদিন সন্ধ্যায় সদানন্দ ফোন দিয়া বলে ভোমা আর সে আসতেসে দেখা করতে। বুঝলাম মিটমাট হয়ে গেছে। গেলাম চিল করতে। সদায় মাল খায় না। তাই স্টার কাবাব থেকে একপিস গরুর শিক কিনে দিল। আমি আর ভোমা কিঞ্চিত জলপান করলাম। সেখানেও সদার কাছ থেকে কিছু খসানো গেলো। যদিও বারে আমরা জলপান করার জন্য যাই না। বারের খাবার আর সালাদ খুবই উচ্চমার্গীয় হয়। সেইটার লোভেই বারে যাওয়া।

সদানন্দরে জিজ্ঞেস করলাম, টেকাটুকা কই পাস? বউয়ের কাছ থেকে নিছস?

- বউ দিবো কেন? এইটা ব্যাংক থেকে লোন নিসি। সেইটাই খরচ করতেসি। মাসে মাসে কিস্তি দেই ব্যবসার থেকে। শেষ হইলে আবার লোন নিমু।

- অসাম... আমি মনে মনে বললাম।

ভোমায় বলল, প্যাড়া নাই বন্ধু চিল। টেকা আছেই খরচ করবার জন্য। ব্যাংকের হোক আর নিজের হোক, টেকার ধর্মই খরচ হওয়া।

আমি এই ব্যাপারে আর কথা বাড়াই না। বারে অনেক দাড়িওয়ালা মুরুব্বী দেখা যাচ্ছে। দেশের পরিস্থিতি খুব খারাপ। কে কার থেকে বড় ইতর এইটা প্রমানের আপ্রান চেষ্টা চলছে। আর বাদ বাকি দর্শক যারা আছে, তারা সবাই এখানে সালাদ খাইতে আসে আমাদের মতো।